ফিকামলি তত্ত্ব পাখির
নানা অঙ্গভঙ্গি দেখে আবদুল ওয়াদুদ শিখতে শুরু করেন মার্শাল আর্ট। 'ইয়োগা
অ্যান্ড পাইলেটস'_এ বিষয়ে ১৯৯২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে 'অল ইন্ডিয়া
রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইয়োগা' থেকে অর্জন করেন 'ব্যায়ামাচার্য্য' ডিগ্রি।
এর পরই পাখির নানা অঙ্গভঙ্গি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। পাখির বিভিন্ন
অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে ব্যায়ামের
সম্পর্ক নিয়ে ২০১০ সালে উদ্ভাবন করেন 'ফিকামলি তত্ত্ব'। শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের ফিজিওথেরাপি, মানসিক সুস্থতার জন্য ক্যাথারসিস্ থেরাপি আর আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। ব্যায়াম+পাখি+ধ্যান=ফিজিও থেরাপি+ক্যাথারসিস থেরাপি+মলিফিকেশন থেরাপি। এই তিনের আদ্যাক্ষর মিলেই 'ফিকামলি' (ফি, ক্যা, মলি)। তার ভাষায়_ফিকামলি হলো_পাখি+ব্যায়াম + ধ্যানের সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সুস্থতার জন্য বিনোদনভিত্তিক অনুশীলন পদ্ধতি। পাখির সংসার নানা ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত নাতি। মন ভরে শুনত পাখির গান। স্কুল ছুটির পর পিছু নিত শালিক, ময়না বা ঘুঘুর। পাখির ডানায় ভর করে হারিয়ে যেত রূপকথার দেশে। হোমওয়ার্কের খাতা ভর্তি করে ফেলত পাখির ছবিতে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনেও পাখির নেশা তাকে ছাড়ল না। বিলুপ্তপ্রায় বিদেশি পাখি সংগ্রহের নেশা ড. আবদুল ওয়াদুদকে এমনভাবে পেয়ে বসল, পাখিই এখন তাঁর সংসার। এই সংসারের মোট বাজারমূল্য তিন কোটি টাকা! প্রতি মাসে খরচ হয় তিন লাখ টাকা জয়ন্ত সাহা '১৯৯৭ সাল। মগবাজার জ্যামে বসে আছি। এক লোক ১৬-১৭টা ঘুঘু নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। পাখিগুলো দেখে মনে হলো তারা খুব কষ্টে আছে। ৬০০ টাকা দিয়ে পাখিগুলো কিনলাম, বাসায় এসে উড়িয়ে দিলাম আকাশে। ওদের উড়ে যাওয়া দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।' এতটাই পাখির প্রতি ভালোবাসা তাঁর। ঢাকায় হাতিরপুলের নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ২৫০ প্রজাতির বিদেশি পাখির বিশাল সংগ্রহশালা। অস্ট্রেলিয়ান রোজেলা দিয়ে এই অভিযানের শুরু। ব্রাজিলের আমাজন বনের স্কারলেট ম্যাকাও কিনেছেন ১৬ লাখ টাকায়। আমাদের টিয়াপাখির সমগোত্রীয় বিরল প্রজাতির গোল্ড ম্যাকাওয়ের জোড়া কিনেছেন ৪০ লাখ টাকায়। খাঁচার কাছে গিয়ে দেখা গেল মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরুষ ম্যাকাও। সম্প্রতি বাবা হয়েছে সে। এই আনন্দ ছুঁয়ে গেল ড. ওয়াদুদকেও 'দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথমবারের মতো ম্যাকাও বাচ্চা ফুটিয়েছে। উপমহাদেশের তাপমাত্রা তেমনভাবে এদের উপযোগী নয়। বংশবিস্তারের জন্য বাড়ির ছাদে কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরি করে জঙ্গলের আবেশ দেওয়ায় ম্যাকাও ডিম দিয়েছে, বাচ্চা ফুটিয়েছে।' বাড়ির মধ্যে সাজানো এই মিনি চিড়িয়াখানায় আরো আছে দক্ষিণ আমেরিকার কাকাতুয়া সরগলম, মুলুকান কাকাতুয়া, আফ্রিকার গ্রে প্যারট, উত্তর আমেরিকার গ্রিনউইংস ম্যাকাও, চ্যাটারিং লরি, ভিয়েতনামের লেডি অ্যামহার্স্ট, সিলভার ফিজেন্ট, অস্ট্রেলিয়ার রক পাবলার, লুকিনো রিং নেক প্যারট ইন্ডিয়া ছাড়াও রং-বেরঙের দুষ্প্রাপ্য আরো অনেক পাখি। এসব দুর্লভ পাখি রক্ষণাবেক্ষণেও অনেক খরচ। পরিচর্যায় একটু এদিক-সেদিক হলেই তারা মারা যেতে পারে। আবার কোনোটি মারা গেলে আরেক জোড়া সংগ্রহ করাও খুব কঠিন। এসব পাখি সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছেন তিনি। একদিন এক ভদ্রলোক পোষা মুলুকান কাকাতুয়ার চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। পাখিটা খুব পছন্দ হলো ড. ওয়াদুদের। ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা, এত টাকা দিয়ে কেনা শখের পাখি হাতছাড়া করতে কোনোভাবেই তিনি রাজি নন। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওয়াদুদ বলে উঠলেন, 'বিনিময়ে আপনি কী চান!' এবার যেন টলে গেলেন পাখির মালিক। ড. ওয়াদুদের দুধেল গাইটা তাঁর খুব পছন্দ। প্রতিদিন দুধ দেয় ১৮ লিটার। শেষমেশ হাতবদল হলো গাই আর পাখি। পাখির মালিক চোখ ছানাবড়া করে বললেন, 'আজব ক্যারেক্টার!'
সারা দিনের রুটিনে পাখিদের জন্যও আলাদা সময়সূচি রাখা আছে ড. ওয়াদুদের। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা, বিকেল ৪টা থেকে ৬টা একান্তে কাটান পাখিদের সঙ্গে। এ সময় বাইরের জগৎ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, বিরক্ত করে না কেউ। নানা নামে ডেকে ডেকে আদর করেন প্রিয় পাখিদের। স্কারলেট ম্যাকাওকে ডাকেন 'মা', মুলুকান কাকাতুয়াকে 'মাইকেল'। পাখিগুলোও সাড়া দেয় এ ডাকে। একদিনের ঘটনা_মায়ের মন কোনো কারণে খারাপ মনে হচ্ছে ছেলের। আদর করে কাছে ডাকলেন তাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে মুখ লুকালো তাঁর বুকে। 'নির্দিষ্ট সময়ে পাখিগুলো যেন তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে আমাকে। এদের ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না। পাখিগুলোর কিছু হলে মনটা খুব খারাপ থাকে।' আর পাখিগুলোও তাঁর সঙ্গে থাকতে থাকতে সভ্য হয়ে উঠছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায় না, কোনোকিছু ভালো না লাগলে শারীরিক ভঙ্গিতে সেটি প্রকাশ করে। আবার কখনো খুশিতে ডিগবাজি খায়। Source: http://www.kalerkantho.com
সম্পর্ক নিয়ে ২০১০ সালে উদ্ভাবন করেন 'ফিকামলি তত্ত্ব'। শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের ফিজিওথেরাপি, মানসিক সুস্থতার জন্য ক্যাথারসিস্ থেরাপি আর আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। ব্যায়াম+পাখি+ধ্যান=ফিজিও থেরাপি+ক্যাথারসিস থেরাপি+মলিফিকেশন থেরাপি। এই তিনের আদ্যাক্ষর মিলেই 'ফিকামলি' (ফি, ক্যা, মলি)। তার ভাষায়_ফিকামলি হলো_পাখি+ব্যায়াম + ধ্যানের সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সুস্থতার জন্য বিনোদনভিত্তিক অনুশীলন পদ্ধতি। পাখির সংসার নানা ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত নাতি। মন ভরে শুনত পাখির গান। স্কুল ছুটির পর পিছু নিত শালিক, ময়না বা ঘুঘুর। পাখির ডানায় ভর করে হারিয়ে যেত রূপকথার দেশে। হোমওয়ার্কের খাতা ভর্তি করে ফেলত পাখির ছবিতে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনেও পাখির নেশা তাকে ছাড়ল না। বিলুপ্তপ্রায় বিদেশি পাখি সংগ্রহের নেশা ড. আবদুল ওয়াদুদকে এমনভাবে পেয়ে বসল, পাখিই এখন তাঁর সংসার। এই সংসারের মোট বাজারমূল্য তিন কোটি টাকা! প্রতি মাসে খরচ হয় তিন লাখ টাকা জয়ন্ত সাহা '১৯৯৭ সাল। মগবাজার জ্যামে বসে আছি। এক লোক ১৬-১৭টা ঘুঘু নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। পাখিগুলো দেখে মনে হলো তারা খুব কষ্টে আছে। ৬০০ টাকা দিয়ে পাখিগুলো কিনলাম, বাসায় এসে উড়িয়ে দিলাম আকাশে। ওদের উড়ে যাওয়া দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।' এতটাই পাখির প্রতি ভালোবাসা তাঁর। ঢাকায় হাতিরপুলের নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ২৫০ প্রজাতির বিদেশি পাখির বিশাল সংগ্রহশালা। অস্ট্রেলিয়ান রোজেলা দিয়ে এই অভিযানের শুরু। ব্রাজিলের আমাজন বনের স্কারলেট ম্যাকাও কিনেছেন ১৬ লাখ টাকায়। আমাদের টিয়াপাখির সমগোত্রীয় বিরল প্রজাতির গোল্ড ম্যাকাওয়ের জোড়া কিনেছেন ৪০ লাখ টাকায়। খাঁচার কাছে গিয়ে দেখা গেল মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরুষ ম্যাকাও। সম্প্রতি বাবা হয়েছে সে। এই আনন্দ ছুঁয়ে গেল ড. ওয়াদুদকেও 'দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথমবারের মতো ম্যাকাও বাচ্চা ফুটিয়েছে। উপমহাদেশের তাপমাত্রা তেমনভাবে এদের উপযোগী নয়। বংশবিস্তারের জন্য বাড়ির ছাদে কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরি করে জঙ্গলের আবেশ দেওয়ায় ম্যাকাও ডিম দিয়েছে, বাচ্চা ফুটিয়েছে।' বাড়ির মধ্যে সাজানো এই মিনি চিড়িয়াখানায় আরো আছে দক্ষিণ আমেরিকার কাকাতুয়া সরগলম, মুলুকান কাকাতুয়া, আফ্রিকার গ্রে প্যারট, উত্তর আমেরিকার গ্রিনউইংস ম্যাকাও, চ্যাটারিং লরি, ভিয়েতনামের লেডি অ্যামহার্স্ট, সিলভার ফিজেন্ট, অস্ট্রেলিয়ার রক পাবলার, লুকিনো রিং নেক প্যারট ইন্ডিয়া ছাড়াও রং-বেরঙের দুষ্প্রাপ্য আরো অনেক পাখি। এসব দুর্লভ পাখি রক্ষণাবেক্ষণেও অনেক খরচ। পরিচর্যায় একটু এদিক-সেদিক হলেই তারা মারা যেতে পারে। আবার কোনোটি মারা গেলে আরেক জোড়া সংগ্রহ করাও খুব কঠিন। এসব পাখি সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছেন তিনি। একদিন এক ভদ্রলোক পোষা মুলুকান কাকাতুয়ার চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। পাখিটা খুব পছন্দ হলো ড. ওয়াদুদের। ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা, এত টাকা দিয়ে কেনা শখের পাখি হাতছাড়া করতে কোনোভাবেই তিনি রাজি নন। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওয়াদুদ বলে উঠলেন, 'বিনিময়ে আপনি কী চান!' এবার যেন টলে গেলেন পাখির মালিক। ড. ওয়াদুদের দুধেল গাইটা তাঁর খুব পছন্দ। প্রতিদিন দুধ দেয় ১৮ লিটার। শেষমেশ হাতবদল হলো গাই আর পাখি। পাখির মালিক চোখ ছানাবড়া করে বললেন, 'আজব ক্যারেক্টার!'
সারা দিনের রুটিনে পাখিদের জন্যও আলাদা সময়সূচি রাখা আছে ড. ওয়াদুদের। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা, বিকেল ৪টা থেকে ৬টা একান্তে কাটান পাখিদের সঙ্গে। এ সময় বাইরের জগৎ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, বিরক্ত করে না কেউ। নানা নামে ডেকে ডেকে আদর করেন প্রিয় পাখিদের। স্কারলেট ম্যাকাওকে ডাকেন 'মা', মুলুকান কাকাতুয়াকে 'মাইকেল'। পাখিগুলোও সাড়া দেয় এ ডাকে। একদিনের ঘটনা_মায়ের মন কোনো কারণে খারাপ মনে হচ্ছে ছেলের। আদর করে কাছে ডাকলেন তাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে মুখ লুকালো তাঁর বুকে। 'নির্দিষ্ট সময়ে পাখিগুলো যেন তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে আমাকে। এদের ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না। পাখিগুলোর কিছু হলে মনটা খুব খারাপ থাকে।' আর পাখিগুলোও তাঁর সঙ্গে থাকতে থাকতে সভ্য হয়ে উঠছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায় না, কোনোকিছু ভালো না লাগলে শারীরিক ভঙ্গিতে সেটি প্রকাশ করে। আবার কখনো খুশিতে ডিগবাজি খায়। Source: http://www.kalerkantho.com