Monday, August 27, 2012

ফিকামলি তত্ত্ব

ফিকামলি তত্ত্ব পাখির নানা অঙ্গভঙ্গি দেখে আবদুল ওয়াদুদ শিখতে শুরু করেন মার্শাল আর্ট। 'ইয়োগা অ্যান্ড পাইলেটস'_এ বিষয়ে ১৯৯২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে 'অল ইন্ডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইয়োগা' থেকে অর্জন করেন 'ব্যায়ামাচার্য্য' ডিগ্রি। এর পরই পাখির নানা অঙ্গভঙ্গি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে ব্যায়ামের
সম্পর্ক নিয়ে ২০১০ সালে উদ্ভাবন করেন 'ফিকামলি তত্ত্ব'।
শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের ফিজিওথেরাপি, মানসিক সুস্থতার জন্য ক্যাথারসিস্ থেরাপি আর আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। ব্যায়াম+পাখি+ধ্যান=ফিজিও থেরাপি+ক্যাথারসিস থেরাপি+মলিফিকেশন থেরাপি। এই তিনের আদ্যাক্ষর মিলেই 'ফিকামলি' (ফি, ক্যা, মলি)। তার ভাষায়_ফিকামলি হলো_পাখি+ব্যায়াম + ধ্যানের সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সুস্থতার জন্য বিনোদনভিত্তিক অনুশীলন পদ্ধতি। পাখির সংসার নানা ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত নাতি। মন ভরে শুনত পাখির গান। স্কুল ছুটির পর পিছু নিত শালিক, ময়না বা ঘুঘুর। পাখির ডানায় ভর করে হারিয়ে যেত রূপকথার দেশে। হোমওয়ার্কের খাতা ভর্তি করে ফেলত পাখির ছবিতে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনেও পাখির নেশা তাকে ছাড়ল না। বিলুপ্তপ্রায় বিদেশি পাখি সংগ্রহের নেশা ড. আবদুল ওয়াদুদকে এমনভাবে পেয়ে বসল, পাখিই এখন তাঁর সংসার। এই সংসারের মোট বাজারমূল্য তিন কোটি টাকা! প্রতি মাসে খরচ হয় তিন লাখ টাকা জয়ন্ত সাহা '১৯৯৭ সাল। মগবাজার জ্যামে বসে আছি। এক লোক ১৬-১৭টা ঘুঘু নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। পাখিগুলো দেখে মনে হলো তারা খুব কষ্টে আছে। ৬০০ টাকা দিয়ে পাখিগুলো কিনলাম, বাসায় এসে উড়িয়ে দিলাম আকাশে। ওদের উড়ে যাওয়া দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।' এতটাই পাখির প্রতি ভালোবাসা তাঁর। ঢাকায় হাতিরপুলের নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ২৫০ প্রজাতির বিদেশি পাখির বিশাল সংগ্রহশালা। অস্ট্রেলিয়ান রোজেলা দিয়ে এই অভিযানের শুরু। ব্রাজিলের আমাজন বনের স্কারলেট ম্যাকাও কিনেছেন ১৬ লাখ টাকায়। আমাদের টিয়াপাখির সমগোত্রীয় বিরল প্রজাতির গোল্ড ম্যাকাওয়ের জোড়া কিনেছেন ৪০ লাখ টাকায়। খাঁচার কাছে গিয়ে দেখা গেল মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরুষ ম্যাকাও। সম্প্রতি বাবা হয়েছে সে। এই আনন্দ ছুঁয়ে গেল ড. ওয়াদুদকেও 'দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথমবারের মতো ম্যাকাও বাচ্চা ফুটিয়েছে। উপমহাদেশের তাপমাত্রা তেমনভাবে এদের উপযোগী নয়। বংশবিস্তারের জন্য বাড়ির ছাদে কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরি করে জঙ্গলের আবেশ দেওয়ায় ম্যাকাও ডিম দিয়েছে, বাচ্চা ফুটিয়েছে।' বাড়ির মধ্যে সাজানো এই মিনি চিড়িয়াখানায় আরো আছে দক্ষিণ আমেরিকার কাকাতুয়া সরগলম, মুলুকান কাকাতুয়া, আফ্রিকার গ্রে প্যারট, উত্তর আমেরিকার গ্রিনউইংস ম্যাকাও, চ্যাটারিং লরি, ভিয়েতনামের লেডি অ্যামহার্স্ট, সিলভার ফিজেন্ট, অস্ট্রেলিয়ার রক পাবলার, লুকিনো রিং নেক প্যারট ইন্ডিয়া ছাড়াও রং-বেরঙের দুষ্প্রাপ্য আরো অনেক পাখি। এসব দুর্লভ পাখি রক্ষণাবেক্ষণেও অনেক খরচ। পরিচর্যায় একটু এদিক-সেদিক হলেই তারা মারা যেতে পারে। আবার কোনোটি মারা গেলে আরেক জোড়া সংগ্রহ করাও খুব কঠিন। এসব পাখি সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছেন তিনি। একদিন এক ভদ্রলোক পোষা মুলুকান কাকাতুয়ার চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। পাখিটা খুব পছন্দ হলো ড. ওয়াদুদের। ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা, এত টাকা দিয়ে কেনা শখের পাখি হাতছাড়া করতে কোনোভাবেই তিনি রাজি নন। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওয়াদুদ বলে উঠলেন, 'বিনিময়ে আপনি কী চান!' এবার যেন টলে গেলেন পাখির মালিক। ড. ওয়াদুদের দুধেল গাইটা তাঁর খুব পছন্দ। প্রতিদিন দুধ দেয় ১৮ লিটার। শেষমেশ হাতবদল হলো গাই আর পাখি। পাখির মালিক চোখ ছানাবড়া করে বললেন, 'আজব ক্যারেক্টার!'
সারা দিনের রুটিনে পাখিদের জন্যও আলাদা সময়সূচি রাখা আছে ড. ওয়াদুদের। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা, বিকেল ৪টা থেকে ৬টা একান্তে কাটান পাখিদের সঙ্গে। এ সময় বাইরের জগৎ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, বিরক্ত করে না কেউ। নানা নামে ডেকে ডেকে আদর করেন প্রিয় পাখিদের। স্কারলেট ম্যাকাওকে ডাকেন 'মা', মুলুকান কাকাতুয়াকে 'মাইকেল'। পাখিগুলোও সাড়া দেয় এ ডাকে। একদিনের ঘটনা_মায়ের মন কোনো কারণে খারাপ মনে হচ্ছে ছেলের। আদর করে কাছে ডাকলেন তাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে মুখ লুকালো তাঁর বুকে। 'নির্দিষ্ট সময়ে পাখিগুলো যেন তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে আমাকে। এদের ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না। পাখিগুলোর কিছু হলে মনটা খুব খারাপ থাকে।' আর পাখিগুলোও তাঁর সঙ্গে থাকতে থাকতে সভ্য হয়ে উঠছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায় না, কোনোকিছু ভালো না লাগলে শারীরিক ভঙ্গিতে সেটি প্রকাশ করে। আবার কখনো খুশিতে ডিগবাজি খায়।  Source: http://www.kalerkantho.com

Saturday, August 25, 2012

ব্যায়ামের নাম ফিকামলি

ব্যায়ামের নাম ফিকামলি - আহমদুল হাসান 'শরীরকে সুস্থ রাখতে আমরা কত কিছুই না করি! জটিল শারীরিক কসরত করতেও আমরা পিছপা হই না। শরীর সুস্থ রাখলেই শুধু হয় না, চাই মন ও আত্মার সুস্থতাও। শরীর, মন আর আত্মার সুস্থতাই হলো প্রকৃত সুস্থতা।' বলছিলেন পাখি গবেষক ব্যায়ামাচার্য ড. আবদুল ওয়াদুদ। পাখির ওপর দীর্ঘ গবেষণা করে তিনি আবিষ্কার করেছেন ফিকামলি তত্ত্ব। ফিকামলি হলো পাখি, ব্যায়াম ও ধ্যানের সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সুস্থতার অনুশীলন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আসে মানসিক প্রশান্তি। বাড়ে মানুষের জীবনীশক্তি ও কর্মক্ষমতা। যারা ব্যায়াম করতে চায় না, এ পদ্ধতি জানলে ব্যায়ামের প্রতি তাদেরও আগ্রহ জন্মাবে।
ফিকামলি কী
শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি, মানসিক সুস্থতার জন্য পাখির মাধ্যমে ক্যাথারসিস থেরাপি এবং আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। সুস্থতার তিনটি মাধ্যমের আদ্যক্ষর মিলে হলো ফিকামলি। এ সম্পর্কে ড. ওয়াদুদ বলেন, 'ব্যায়ামের আগে চাই মনের সুস্থতা। পাখি দেখলে মানুষের মনের সুস্থতা আসে। আর আত্মার সুস্থতা আসে ধ্যানের মাধ্যমে। পাখির সাহায্যে মানসিক ও আ@ি@@@ক সুস্থতা নিশ্চিত করে ব্যায়াম করার পদ্ধতিই হলো ফিকামলি।' তিনি আরো বলেন, পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও খাদ্যাভ্যাস থেকে অনেক ব্যায়ামের উৎপত্তি হয়েছে। পদ্ধতিটি একদিকে যেমন বিনোদনভিত্তিক, অন্যদিকে চিন্তাপ্রবণ অনুুশীলন। পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর বলে তিনি জানান। ড. ওয়াদুদের দাবি, এটা শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বের ব্যায়ামজগতে এক অভিনব পদ্ধতির উদ্ভাবন।
যাদের জন্য প্রযোজ্য
বহুলপরীক্ষিত এ পদ্ধতির ব্যায়াম শরীরকে নীরোগ, মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে। আনন্দ ও বিনোদনের জন্য সব বয়সের নারী ও পুরুষ এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে। এটি যেমন সহজ, তেমনি কার্যকর। চাইলে নিজের বাসায়ও এই ব্যায়াম করতে পারেন।
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য
শিশুদের কাছে পাখি অত্যন্ত প্রিয়। পাখি দেখলে তাদের মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি আসে এবং ব্যায়ামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। শুধু স্বাভাবিক শিশু নয়, এ ব্যায়াম প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ ফল দেয়। মানসিকভাবে অস্থির এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করালে তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে আসে। এতে তারা বিনোদন ও সুস্থতা ফিরে পায়।
উপকারিতা
যারা ব্লাড প্রেসারের রোগী, তাদের জন্য ব্যায়ামটি বিশেষ উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পদ্ধতিটি পরীক্ষিত। ক্রোধ, টেনশন দূরীকরণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এই ব্যায়াম অতুলনীয়। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে এ ব্যায়াম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
জিম ও চিড়িয়াখানা
ফিকামলি ব্যায়াম প্রশিক্ষণের জন্য ড. ওয়াদুদ প্লাটিনাম জিমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছেন মিনি চিড়িয়াখানা। হাতিরপুলে অবস্থিত এই মিনি চিড়িয়াখানায় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির এক দুর্লভ প্রদর্শনী গড়ে তুলেছেন। এখানে আছে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অতি দুর্লভ প্রজাতির নানা রকম পাখি ও হরিণ। পরিচর্যার সুবিধার্থে তিনি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা রেখেছেন। তিনি জানান, পাখির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটু অবহেলা হলেই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। তাই সর্বক্ষণই রাখতে হয় বিশেষ নজর। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণা করে তিনি সম্প্রতি দুর্লভ ম্যাকাও পাখির প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। সদ্য মা হওয়া ম্যাকাও পাখির গতিবিধি ও বাচ্চার বেড়ে ওঠা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়, দেখানো হচ্ছে বড় পর্দায়। দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যে চিড়িয়াখানাটি পরিদর্শন করতে পারে। আর কেউ যদি পাখি পুষতে এবং ফিকামলি সম্পর্কে জানতে চায়, এখান থেকে সহায়তা করা হয়। চাইলে প্লাটিনাম জিমে এসে ফিকামলি পদ্ধতিতে ব্যায়ামও করতে পারেন।
যোগাযোগ : ২২/২ হাতিরপুল, ঢাকা-১২০৫, মোবাইল : ০১৭১৮৩৬৭৮১৮, ০১৯১১৩২৬২৩০।
 Source: http://www.kalerkantho.com/  
ড. ওয়াদুদের পাখি জগত


মানুষের কৌতুহল আর আগ্রহে বৈচিত্র্যের কোনো শেষ নেই। এমনই এক বিচিত্র তত্ত্ব হচ্ছে 'ফিকামলি'। এই তত্ত্ব হচ্ছে পাখি, ব্যায়াম, ধ্যান- এ তিনের সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সার্বিক সুস্থতার জন্য বিনোদন ভিত্তিক চিন্তাপ্রবণ অনুশীলণ পদ্বতি। পাখির উপর দীর্ঘ গবেষণায় এই তত্ত্বের আবিষ্কার করেন ড. আবদুল ওয়াদুদ। সুস্থতার তিনটি মাধ্যমের অদ্যাক্ষর মিলিয়ে পদ্ধতির নামকরণ করা হয় ফিকামলি। দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ও বহুল পরিক্ষীত এই পদ্ধতির ব্যায়াম শরীরকে নিরোগ, মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে।

শারিরীক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। আর ব্যায়ামেরই অভিনব ধরন ও পদ্ধতির সমন্বয় করা হয়েছে এই ফিকামলি তত্ত্বের মাধ্যমে। আর সবক্ষেত্রেই রয়েছে পাখির ব্যবহার। ফিজিওথেরাপি, ক্যাথারসিস থেরাপি, মলিফিকেশন থেরাপিসহ অভিনব সব পদ্ধতি মানুষের শরীর, মন ও আত্মার সুস্থতা নিশ্চিত করে বলে দাবি করেন ড. ওয়াদুদ। অনাবিল আনন্দ মানসিক প্রশান্তি ও চিত্তবিনোদনের জন্য সব বয়সের নারী পুরুষের কাছে এ ব্যায়াম সহজ ও বেশি কার্যকরী। বিশেষ করে ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন, ক্রোধ, টেনশন দূরীকরণে ও হৃদরোগের ঝুঁিক কমাতে এ ব্যায়াম অতুলনীয়। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে এ ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সমগ্র বিশ্বে ব্যায়াম জগতে এক নতুন ধারণা। ড. আবদুল ওয়াদুদ এর ব্যায়ামের সাথে পাখির দীর্ঘ গবেষণায় দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিরল প্রজাতির ম্যাকাও পাখি ও অন্যান্য বিদেশী পাখি ডিম ফুটে বাচ্চা দিয়েছে। ২২/২, হাতিরপুলে অবস্থিত প্লাটিনাম জিমের নিজস্ব মিনি চিড়িয়াখানায় মা পাখির গতিবিধি ও বাচ্চার বেড়ে ওঠা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে ও বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে। দর্শনার্থীরা বিনামূল্যেই চিড়িয়াখানাটি পরিদর্শন করতে পারেন। এখানে রয়েছে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অতি দুর্লভ প্রজাতির নানারকম পাখি ও হরিণ। এসব পুষতে আগ্রহীদের এখান থেকে সহায়তা করা হয়। পাখির অসুখ বিসুখে দেওয়া হয় বিনা খরচে পরামর্শ । * রকমারি ডেস্ক
 

Monday, August 20, 2012

মানসিক প্রশান্তি আনন্দ: ৪০ লাখ টাকার পাখি ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও : রাজধানীতে বিদেশী পাখির প্রদর্শনী

মানসিক প্রশান্তি আনন্দ: ৪০ লাখ টাকার পাখি ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও:
রাজধানীতে বিদেশী পাখির প্রদর্শনী
সৈয়দ সোহরাব ॥ প্রকৃতির অনুপম সৃষ্টি পাখি আর ফুল। তবে শিশু-কিশোরদের পৰপাত জীবজন্তু ও পাখির দিকেই। কেননা তাদের গতি আছে। পাখিরা আবার উড়ুক্কু বলে শিশু-কিশোররা তাতে খুঁজে পায় বিশেষ ধরনের এক মাত্রা। কারণ না চাইতেই এই পাখিরা উড়ে এসে বসে জানালার কার্নিসে, বাড়ির আঙ্গিনায়। রং ছড়ায়, গানও গায়। তবে গাছপালাহীন ইট-কংক্রিটের এই নগরী থেকে দিন দিনই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি ও গাছপালা। প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন আধুনিক সভ্যতাই এর মূলব্যাধি। ফলে ফিঁকে হচ্ছে স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের পরিধি, দুর্বল হচ্ছে মানুষের মন। বিলম্ব সত্ত্বেও এ থেকে খুঁজে নিতে হবে আরগ্যের পথ। কারণ শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন প্রয়োজন ব্যায়াম, তেমনি মানসিক প্রশানত্মি, অনাবিল আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রয়োজন পাখি ও ফুল। তাই নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়, বারান্দায় বা ছাদে ফুলের বাগান এবং দেশী-বিদেশী পাখি পালনের ব্যবস্থা করতে হবে নিজ উদ্যোগেই। যেমনটি করেছেন ড. আব্দুল ওয়াদুদ। হাতিরপুলে ইস্টার্ন পস্নাজা সংলগ্ন নিজ বাড়িতেই তিনি গড়ে তুলেছেন মিনি চিড়িয়াখানা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ছাদে লাগিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের গাছ, আর শরীরকে সুস্থ রাখতে আছে ব্যায়ামাগার ও ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। এই বাড়িতেই তিনি প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছেন চার দিনব্যাপী বিদেশী পাখির প্রদর্শনী। আজ শনিবার এই প্রদর্শনীর শেষ দিন। তবে প্রদর্শনী ছাড়াও প্রতিদিন সহস্রাধিক দর্শনার্থী আসেন তাঁর মিনি চিড়িয়াখানা দেখতে। গত বুধবার এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী দিনে 'পরিবেশ উন্নয়নে পশুপাখির ভূমিকা' শীর্ষক এক আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয়েছিল।
মিনি চিড়িয়াখানার এই প্রদর্শনীতে প্রায় ২৫০ প্রজাতির বিদেশী পাখি রয়েছে। দেখতে পাখিগুলো খুবই সুন্দর এবং তাদের নামও বেশ বাহারি। যেমন- বস্নু, গোল্ড ম্যাকাও, স্কারলেট ম্যাকাও, গ্রীন উইং ম্যাকাও, হ্যান্স ম্যাকাও, কাইক, পিন্যান্ট, সিনাসন, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, লেডি আমহাস্ট, রোবিনো রোজেলা, বস্ন্যাক ক্যাপ, বাজরিকা, ইস্টার্ন রোজেলা, আমাজান প্যারট, রক পাবলার, বুরকিস প্যারাকিট, কাকারাকি, বিভিন্ন প্রজাতির কাকাতুয়া, সান কর্নার, হলুদ, সিলভার বস্নু ও ধূসরসহ বিভিন্ন রং ও প্রজাতির টিয়া, বাজরিগর, জাভা, ইলেক্টাস, র্যাম, ডায়মন্ড ডাভ, গ্রীন ডাভ, ফিঞ্চ, রেইনবো লরি, চ্যাটারিং লরি, বস্ন্যাক ক্যাপ লরি, জানদিয়ার, প্যারাকিট, মুলুকান কাকাতুয়া, সালফার ক্যাস্টেট কাকাতুয়া, গোল্ডেন ফ্রিজেন্ট, সিলভার ফ্রিজেন্ট, বিভিন্ন রঙের লাভবার্ড ইত্যাদি।
পাখিগুলোর সঙ্গে এর মালিক আব্দুল ওয়াদুদের বেশ সখ্য লৰ্য করা গেল। যা উৎসুখ দর্শনার্থীরা আগ্রহ ভরেই দেখছেন। আমরা জানি প্রশিৰণ দেয়া পাখি কথা বলে, ডিগবাজি খায়, কিন্তু তাঁর পাখিগুলো একটু বেশিই প্রশিৰণ পাওয়া বলে মনে হলো। কারণ তিনি যা বলছেন, তাই শুনছেন এবং করছেন। যেমন- মা, নেমে আস, হাতে বসো, গালে চুমু দাও ইত্যাদি। পাখিগুলোও ঠিক তা, তা-ই করছে।
তাঁর চিড়িয়াখানায় সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা পাখি আর সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা মূল্যের বস্নু-গোল্ড ম্যাকাও এর দম্পতি রয়েছে। সম্প্রতি এই ম্যাকাও পরিবার বাচ্চা ফুটিয়েছে। যা দৰিণ-পূর্ব এশিয়াতেই প্রথম। উলেস্নখ্য, ম্যাকাও গভীর জঙ্গলের পাখি। সে রকম পরিবেশ না পেলে ডিম পাড়া ও বাচ্চা ফুটানো তো দূরে থাক, তাদের অসত্মিত্ব টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর। তাই এই পাখির বংশ বিসত্মারের জন্য আব্দুল ওয়াদুদ ছাদে গাছ-গাছালি লাগিয়ে কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরি করে জঙ্গলের আবেশ দেয়াতেই ম্যাকাও ডিম দিয়েছে ও বাচ্চা ফুটিয়েছে। তাঁর সংগৃহীত পাখির মধ্যে বস্নু-গোল্ড ম্যাকাও একটি দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ প্রজাতির পাখি। যেমন এর বাহারি রং, তেমনি চমক লাগানো এর কাজকর্ম। সুদূর মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের এই পাখি বাংলাদেশের টিয়া পাখির সমগোত্রীয় এবং গড়নও তেমনই। তবে আকারে অনেক বড়। এদের আদি নিবাস প্রধানত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল আমাজান জঙ্গলে। এই বিরল প্রজাতির পাখি গোটা উপমহাদেশেই আছে হাতেগোনা কয়েকটি। বিশ্বেও এর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে বাংলাদেশে রয়েছে বস্নু-গোল্ড ম্যাক্যাও-এর এই দম্পতি। দৃষ্টিনন্দন এ বস্নু-গোল্ড ম্যাক্যাও পাখি সাধারণত ব্রাজিল, বলিভিয়া, ত্রিনিদাদ, ম্যাঙ্েিকা, কোস্টারিকা ও পানামার গভীর জঙ্গলে দেখা যায়। টিয়ার মতো এই ম্যাক্যাও পাখি শখ করেই পুষে থাকে মানুষ। উপমহাদেশের আদর্্রতা আর তাপমাত্রা এদের খুব একটা উপযোগী নয়। তাই এই পাখিটি সবাই পুষতে পারে না। এই পাখিটিসহ এমনই রং-বেরঙের শত শত দুষ্প্রাপ্য আরও অনেক পাখির সংগ্রহ রয়েছে এ মিনি চিড়িয়াখানায়। দুর্লভ এসব পাখি রক্ষণাবেক্ষণ অত্যনত্ম ব্যয়বহুল। পরিচর্যায় একটু ব্যতিক্রম বা অবহেলা হলেই মৃতু্যর ঝুঁকি থাকে। টাকার অঙ্কে একটি পাখির মৃতু্যর ধকল অনেক বেশি হলেও আরেক জোড়া সংগ্রহ করা তার চেয়েও কঠিন বলে জানালেন সংগ্রাহক আব্দুল ওয়াদুদ। তাই বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছেন তিনি। উলেস্নখ্য, তাঁর কাছে সংগৃহীত এসব পাখির আনত্মর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা।
প্রদর্শনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামের ছেলে বলেই ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল যখন যেখানে থাকব প্রকৃতির ছোঁয়ায় বা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকব। আর ছোটবেলা থেকেই পাখি ভালবাসতাম, পাখির অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে নিজেও হাত-পা চালাতাম, এভাবে কখন যে পাখির প্রেমে পড়ে যাই, তা আর বলতে পারি না। তবে এখন পাখিই আমার ধ্যান-জ্ঞান। সেই চিনত্মা থেকেই নিজ বাড়িতে এমন আয়োজন। আর প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পাখি প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ পাখি যেমন পরিবেশের ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে সুস্থ রাখে, তেমনি এই পাখি মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার শিৰা দিতে পারে। পাখির অঙ্গ চালনা থেকেই নিজে মার্শাল আর্ট শিখতে উদ্বুদ্ধ হই। আর একমাত্র বাংলাদেশীই আমি, যিনি ইয়োগা এ্যান্ড পাইলেটস'-এর ওপর কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য ১৯৯২ সালে 'অল ইন্ডিয়া রিসার্স ইনস্টিটিউট অব ইয়োগা' থেকে 'ব্যায়ামাচার্য্য' ডিগ্রী লাভ করি। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে ব্যায়ামের সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে ২০১০ সালে 'ফিকামলি' তত্ত্বের আবিষ্কার করি। যা এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতে চলেছে। ফিকামলি হলো 'পাখি + ব্যায়াম + ধ্যান-এর সমন্বয়ে দেহ, মন ও আত্মার সুস্থতার জন্য বিনোদনভিত্তিক চিনত্মাপ্রবণ অনুশীলন পদ্ধতি।' যেমন, দেহের সঙ্গে ব্যায়ামের সম্পর্ক, আবার ব্যায়ামের সঙ্গে বিনোদনের, তেমনি বিনোদনের সঙ্গে পাখির সম্পর্ক। অর্থাৎ পাখি দেখার সঙ্গে সঙ্গে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার অটোনোমাস নার্ভাস সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাল লাগার কাজ করতে থাকে। পাখি সিস্নম, স্মাার্ট ও ন্যাচারাল সৌন্দর্যের প্রতীক। অনেক খাবার সহজলভ্য হওয়া সত্ত্বেও পাখি বেশি বেশি খেয়ে তার ওড়ার ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা হারায় না। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্যাভাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক বেশি বেশি খেয়ে মেদভূঁিড় বাড়িয়ে আসত্মে আসত্মে কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে, দৈহিক সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন রোগ আক্রমণের সহজ শিকারে পরিণত হয়। তখনই মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারে। তা ছাড়া পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও খাদ্যাভাস থেকে অনেক ব্যায়ামের উৎপত্তি হয়েছে। শারীরিক সুস্থতার জন্য পাখি এবং ব্যায়ামের যোগসূত্র সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সুস্থতা বলতে শুধু শারীরিক সুস্থতাকেই বোঝায় না, দেহ, মন ও আত্মার সম্মিলিত সুস্থতাই প্রকৃত অর্থে সুস্থতা। শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা পাই ফিজিওথেরাপি। মানসিক সুস্থতার জন্য পাখির মাধ্যমে পাই ক্যাথারসিসথেরাপি, আর আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। ব্যায়াম+ পাখি+ ধ্যান = ফিজিও থেরাপি+ ক্যাথারসিস থেরাপি+মলিফিকেশন থেরাপি। তিনটির আদ্যোক্ষর মিলেই 'ফিকামলি' (ফি, ক্যা, মলি)। ফিকামলি ব্যায়াম সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতির ব্যায়াম। দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ও বহুল পরিক্ষীত এই পদ্ধতির ব্যায়াম শরীরকে নিরোগ, মনকে সতেজ ও প্রফুলস্ন রাখে। অনাবিল আনন্দ মানসিক প্রশানত্মি ও চিত্তবিনোদনের জন্য সব বয়সের নারী-পুরম্নষের কাছে এ ব্যায়াম সহজ ও বেশি কার্যকরী। বিশেষ করে বস্নাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, নিয়ন্ত্রণ, ক্রোধ, টেনশন দূরীকরণে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এ ব্যায়াম অতুলনীয়। বাচ্চাদের মানসিক বিকাশেও এ ব্যায়াম গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে ব্যায়াম জগতে এক নতুন ধারণা ও পদ্ধতির উদ্ভাবন। তাই সকলেরই নিজ বাড়িতে প্রকৃতির আমেজ তৈরি করে শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর দেয়া উচিত


Source: http://www.dailyjanakantha.com 
 

Saturday, August 18, 2012

৩ মিনিটের ব্যায়াম

৩ মিনিটের ব্যায়াম

প্রতিদিন মাত্র তিন মিনিটের ব্যায়ামই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। সম্প্রতি ইংল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী সপ্তাহে ৩ বারে ২০ মিনিট  অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩ মিনিটের কম সময় সাইক্লিং করলেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১০০ জনের ওপর পরিচালিত ৬ সপ্তাহের গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৩ বারে ২০ মিনিট সাইক্লিং করার ফলে তাদের ইন্সুলিন হরমোন এর কার্যক্ষমতা ও পুনরুত্পাদন ২৮ শতাংশ বেড়ে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
গবেষণাকারী নিলস ভল্লার্ড বলেন,"আমাদের শরীরে শর্করা রয়েছে যার নাম ‘গ্লাইকো্জেন’।এই গ্লাইকো্জেন ব্যায়ামের সময় ব্যবহৃত হয়। ব্যায়ামের পর এই শর্করার মাত্রা ফিরিয়ে আনতে আমাদের রক্তে শর্করা থাকা জরুরি যা মাংশপেশি সবল রাখতে সাহায্য করে। নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলায় এই ইন্সুলিন হরমোন তৈরি হতে অনেক বেশি সময় লাগে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া ও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।"
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিদিন সাইক্লিং, ব্যায়াম, হাল্কা হাটাহাটি  করানো হতো। নিলস ভল্লার্ড আরও বলেন, আমাদের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ব্যায়াম ছাড়া এই ‘গ্লাইকো্জেন’ হরমোন বাড়ানোর আর কোনো সহজ পদ্ধতি নেই।
এ গবেষণাটি একটি ল্যাবে পরিচালিত হয়েছে। তবে এধরনের হাল্কা শারীরিক ব্যায়াম আমরা কর্মক্ষেত্রে বা ব্যায়ামাগারে অনুশীলন করতে পারি। তিনি আরও বলেন, এই মাত্রার ব্যায়াম ওজন হ্রাসে সাহায্য করে না, তবে সাধারণ ফিটনেস বাড়াতে সাহায্য করে।

Monday, August 6, 2012

সাইকেল চালক স্কারলেট ম্যাকাও

সাইকেল চালক স্কারলেট ম্যাকাও

-ড. ওয়াদুদের গবেষণা

০০ ইত্তেফাক রিপোর্ট

'আয় রে আয় টিয়ে, নাও ভরা দিয়ে। নাও নিয়ে গেল বোয়াল মাছে, তা দেখে দেখে ভোদর নাচেঃ শৈশবে এই ছড়া পড়েনি- এমন বাঙ্গালি বিরল। তবে এছড়া পড়ার পর বোয়াল মাছে নাও নিয়ে গেলে তা দেখে ভোদড় নাচে কিনা বা 'টিয়ে নাও ভরা' দিয়ে আসে কিনা- এমন প্রশ্ন কেউ কখনো তুলেছে বলে শোনা যায়নি। প্রশ্ন কেউ তুলক বা না তুলুক, টিয়া 'নাও ভরা দিয়ে' না আসলেও তারা যে সাইকেল চালিয়ে আসতে জানে- তা এ ছবি দেখলেই বেশ বোঝা যায়। সাইকেল চালক এই ম্যাকাও আমাদের টিয়ারই স্বগোত্রীয়। এদের নিবাস মূলত দক্ষিণ আমেরিকায়। তবে উত্তর আমেরিকার কিছু অংশেও এদের দেখা মেলে। অতি দুর্লভ জাতের এই পাখির নাম স্কারলেট ম্যাকাও। শুধু দেখতে সুন্দর তাই নয় অনেক গুণও আছে। শেখালে এরা মানুষের অনুকরণে 'কথা বলতে' পারে, খেলাধুলাও করতে পারে কিছু কিছু। এই পাখি নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন অ্যান্ড রিয়ারিং এসোসিয়েশনের মহাসচিব পক্ষি প্রেমিক ড. আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি স্কারলেট ম্যাকাও নিয়ে গবেষণার পর ব্যায়ামের এক নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন। নিজস্ব পস্নাটিনাম জিমে এ ফিকামলি ব্যায়াম প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য মেক্সিকোতে জন্ম নেয়া এই স্কারলেট ম্যাকাও পাখিটি সংগ্রহ করতে তিনি খরচ করেছেন ২০ হাজার ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪ লাখ টাকা।

স্কারলেট ম্যাকাও 'কথা বলে', খেলাধুলা করে, সবার সাথে মিশতে পারে এবং সর্বোপরি ফিকামলি ব্যায়ামে রয়েছে এর বিশেষ ভূমিকা। সারা পৃথিবীতে এই জাতের পাখি খাঁচায় পোষা অবস্থায় আছে ২০০টিরও কম। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে এই সংখ্যা ১০টির বেশি নয়। পাখিটি দৈর্ঘ্যে ৩৩ থেকে ৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গভীর জঙ্গলে বড় গাছের কোঠরে, বিশেষ করে পাইন গাছে বাসা বাঁধে। এদের গড় আয়ু প্রায় ৫০ বছর। এরা বছরে একবার দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান জঙ্গলে বসবাসকারী স্কারলেট উপজাতির লোকজন এই পাখির পালক দিয়ে তাদের বাহারি পোশাক, মুকুট ও অলংকার তৈরি করে।

ড. আব্দুল ওয়াদুদ ওই পাখির সাহায্যে ব্যায়ামের ফিকামলি তত্ত্বটিকে ব্যাখ্যা করেছেন অনেকটা এভাবে 'মনের সাথে দেহের সম্পর্ক।' দেহের সাথে ব্যায়ামের সম্পর্ক। ব্যায়ামের সাথে বিনোদনের সম্পর্ক। বিনোদনের সাথে পাখির সম্পর্ক'। ঢাকার হাতিরপুলের ২২/২ নাম্বার বাসায় গড়ে তোলা তার মিনি চিড়িয়াখানা এবং পস্নাটিনাম জিমে পশুপাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ, অনুসরণ করে ব্যায়াম, অ্যারোবিক্স, যোগাসন ও মেডিটেশন শেখানো হয়।

শারীরিক সুস্থতার জন্য পাখি এবং ব্যায়ামের যোগসূত্র সম্পর্কে ড. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সুস্থতা বলতে শুধু শারীরিক সুস্থতাকেই বুঝায় না। শরীর, মন ও আত্মার সম্মিলিত সুস্থতাই হল প্রকৃত অর্থে সুস্থতা। শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি, মানসিক সুস্থতার জন্য পাখির মাধ্যমে ক্যাথারসিস থেরাপি, আত্মার সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের মাধ্যমে করা হয় মলিফিকেশন থেরাপি। পাখি-ব্যায়াম-ধ্যান এ তিনের সমন্বয়ে ফিকামলি ব্যায়াম।

ড. ওয়াদুদ দাবি করেন, তার দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ও বহুল পরীক্ষিত এই পদ্ধতির ব্যায়াম শরীরকে নিরোগ, মনকে সতেজ ও প্রফুলস্ন রাখে। অনাবিল আনন্দ, মানসিক প্রশান্তি ও চিত্ত বিনোদনের জন্য সব বয়সের নারী-পুরুষের কাছে এ ব্যায়াম সহজ ও বেশি কার্যকরী। বিশেষ করে বস্নাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, ক্রোধ, টেনশন দূরীকরণ ও বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে এ ব্যায়াম অতুলনীয়। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে ব্যায়াম জগতে এক নতুন ধারণা ও পদ্ধতির উদ্ভাবন।
 

Friday, July 27, 2012

নতুন আয়ের ক্ষেত্র জিমনেশিয়াম

নতুন আয়ের ক্ষেত্র জিমনেশিয়াম

রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা লক্ষ্যণীয়। এই বাস্তবতাকে অবলম্বন করে শুরু হয়েছে শরীরচর্চা বা জিমনেশিয়াম স্থাপন। অন্য পেশার পাশাপাশি এর মাধ্যমেও আয় হচ্ছে কিছু বাড়তি রোজগার। বিভিন্ন জিমনেশিয়াম ঘুরে প্রতিবেদনটি লিখেছেন _শামছুল হক রাসেল


বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন আয়ের উৎস বা ক্ষেত্র হতে পারে জিমনেশিয়াম। গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার আশায় বসে না থেকে ভিন্নধর্মী এ পেশায় খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায় নিজের ভাগ্য। অনেকেই টাকা থাকা সত্ত্বেও তা বিনিয়োগের সঠিক জায়গা খুঁজে পান না। তাদের জন্য চমৎকার একটি ক্ষেত্র হতে পারে এই শরীরচর্চা কেন্দ্র বা জিমনেশিয়াম। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যবসা বা উদ্যোগ অনেকটাই নতুন। মানুষের মধ্যে আগের তুলনায় এখন স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বেশ সচেতন। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী নেই শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের জায়গা। আর এই সুযোগকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন। প্রাথমিক শুরু : শরীরচর্চা কেন্দ্র ঘিরেই জমে উঠতে পারে আপনার ব্যবসা। এ জন্য আপনাকে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বড় পরিসরে শুরু করতে না চাইলে স্বল্প পরিসরেও শুরু করতে পারেন। নিজে জিম স্থাপনের আগে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি জিম ঘুরে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে জিমের মালিক ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এতে একটি ভালো ধারণা আসবে। জিমনেশিয়ামে সদস্যরা সাধারণত আসে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, মডেল ফিগার তৈরি করা, বডি বিল্ডআপ করা ও মেদ বা ওজন কমানোর জন্য। মূলত এ চার ধরনের সদস্যকে লক্ষ্য রেখেই এগুতে হবে। স্থান নির্বাচন : জিমনেশিয়ামের জন্য স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল করলে চলবে না। স্থান বা জায়গা নির্বাচনই আসল কথা। খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যাবে এমন স্থান বেছে নিতে হবে। গ্রাহকদের যাতায়াতে সুবিধা হবে এ রকম জায়গা হলে ভালো। জিমের বেশিরভাগ গ্রাহকই তরুণ। তাই তরুণরা বেশি যাতায়াত করে এমন একটি স্থানে জিমনেশিয়াম স্থাপন করতে পারেন। প্রচারেই প্রসার : জিম স্থাপনের আগে এলাকার তরুণদের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন বা তাদের মতামত, আগ্রহ এসব বিষয় যাচাই করে দেখতে পারেন। জিমনেশিয়াম স্থাপনের পর তার একটি সুন্দর নাম ঠিক করুন। তারপর একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিন। এলাকায় পোস্টারিং, লিফলেট, ব্যানার প্রভৃতির মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানের প্রচার করতে পারেন। এলাকায় বেশি চলে এ রকম কোনো দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতে পারেন। আর তা সম্ভব না হলে দৈনিক পত্রিকাগুলোর ভেতর প্রচারপত্র ঢুকিয়ে তা বিলি করতে পারেন হকারের মাধ্যমে। পত্রিকার হকারদের কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই তারা এ ব্যবস্থা করে দেবে। উপকরণ ও অবকাঠামো : একটি জিমনেশিয়ামের জন্য ট্রেডমিল, সাইক্লিং, পুশআপ বার, ডাম্বেলসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। ট্রেডমিলের দাম ৫০ হাজার থেকে ছয় লাখ টাকা। পুশআপ বার ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সাইক্লিং সাড়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার, ক্রস ট্রেইনার পাঁচ থেকে আট হাজার, স্টেপার ছয় থেকে ১০ হাজার এবং স্মিথ স্কট ও ক্রসবার পাওয়া যাবে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বারবেল ও ডাম্বেল কিনতে হয় কেজি হিসেবে। লেট পুল ডাইন ৬০ থেকে ৭০ হাজার, লেগ প্রেস মেশিন ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং অলিম্পিক বার বেঞ্চ প্রেস, অলিম্পিক বেঞ্চ ইনক্লায়েন্ট, ডিকলায়েন্ট প্রভৃতি পাওয়া যাবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। শরীর গরম করার স্যনা মেশিনের দাম পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। টি-বারের দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, শোল্ডার প্রেস মেশিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার ও স্টিম বাথ পাওয়া যাবে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। যেখানে পাবেন : এ সেক্টরের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি আসে চীন ও তাইওয়ান থেকে। তবে আমাদের দেশেও কিছু সরঞ্জাম তৈরি হয়। স্টেডিয়াম মার্কেট ছাড়াও ঢাকার গুলশান, বনানীর অভিজাত দোকানগুলোয় এসব ব্যায়ামের সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। আর এসব যন্ত্রপাতি কেনার সময় দক্ষ বা অভিজ্ঞ কোনো ট্রেইনারকে সঙ্গে রাখতে হবে। যা যা লাগবে : একটি জিমনেশিয়াম ভালোভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই দু'জন প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হবে। এদের মধ্যে একজন প্রধান প্রশিক্ষক, তিনি সদস্যদের রুটিন করে দেবেন। আর একজন প্রশিক্ষক যিনি থাকবেন তিনি রুটিন অনুসারে সদস্যদের শরীরচর্চা দেখিয়ে দেবেন। এ ছাড়া সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য আরও দুই-তিনজন কর্মীর প্রয়োজন। জিমনেশিয়ামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা সম্ভব না হলে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। জিমের অনেক যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎচালিত, তাই লোডশেডিং থেকে রক্ষা পেতে রাখতে হবে জেনারেটর। 

 

Thursday, July 26, 2012

প্রচলিত কোয়ান্টাম মেথড ও ইসলামের মোরাকাবা পদ্ধতি

প্রচলিত কোয়ান্টাম মেথড ও ইসলামের মোরাকাবা পদ্ধতি

- লিখেছেন রিজওয়ান জমীরাবাদী

 মুরাকাবা ইলমে তাসাওউফের একটি প্রসিদ্ধ অধ্যায়৷ যুগ যুগ ধরে ওলি আউলিয়াদের মাঝে এর চচর্া হয়ে আসছে৷ মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার ভালবাসা জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করাই এর উদ্দেশ্য৷ সদা এক আল্লাহর স্মরণ অন্তরে থাকলে মানুষের পক্ষে তাঁর নাফরমানী সম্ভব নয়৷ মুরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাকে দেখছেন এবং আমার সাথে আছেন এই বোধ জাগ্রত করে তোলারই চেষ্টা হয়৷ প্রসিদ্ধ হাদীসে জিব্রাঈলে যাকে 'ইহসান' বলে সঙ্গায়ীত করা হয়েছে৷ ''তুমি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত কর যেন তুমি তাকে দেখছ, আর তুমি তাকে দেখতে না পেলেও তিনি তোমাকে দেখছেন''৷ মুরাকাবার মাঝে মনকে সকল ধরনের চিন্তা মুক্ত করে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুধু মাত্র একটি বিষয়ে ভাবা হয়৷ এবং লাগাতার দীর্ঘ সময় ধরে অনবরত কল্পনা করা হয়৷

ইসলামের এই মুরাকাবার ন্যায় অন্যান্য ধর্মের সাধকদের মাঝেও আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য মন নিয়ন্ত্রনের সাধনা করতে দেখা যায়৷ হিন্দু যোগীদের যোগ্যধ্যান এবং বৌদ্ধদের বিপাসন ধ্যান এর অন্যতম৷ তবে মুসলমান সূফী-ওলীদের মুরাকাবা আর অমুসলিমদের ধ্যান বা যোগ সাধনার মাঝে তফাত সাত সমুদ্রের৷ কারণ প্রত্যেকেই এর রিয়াযত মুজাহাদা বা সাধনা করে থাকে নিজ নিজ ধর্মের আকি্বদা-বিশ্বাস ও রিতিনীতির অনুসরণে৷ ইসলাম একমাত্র একত্ববাদের ধর্ম আর বাকী সব বহু ইশ্বরবাদে বিশ্বাসী বা নাস্তিক যেমন হিন্দু বৌদ্ধ সমাজ৷ কাজেই ধ্যানের ক্ষেত্রেও এসকল বিশ্বাসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়৷


ধ্যান- মুরাকাবার মৌলিক উত্সে র মাঝে গবেষনা করে পশ্চিমা চিকিত্সার বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন মন নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি, যার নামকরণ করা হয়েছে 'মেডিটেশন'৷ তাদের গবেষনায় বের হয়ে এসেছে মন-মস্তিস্কের মাঝে ধ্যানের প্রভাব৷ তারা দেখতে পেয়েছে যে ধ্যানের মাধ্যমে মানুষের মনে যে বিষয় গেথে দেয়া হয় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সে অনুসারে পরিচালিত হয়৷ অথর্াত্‍ মনের বিশ্বাস অন্য অঙ্গকে প্রভাবিত করে৷ রোগ মুক্তি ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই ধ্যানের ফরমূলা অনুসরণ করে এক জন রোগীর মনের অবস্থা পরিবর্তন করা গেলে অনেকটা সফলতা পাওয়া যাবে৷ ৬০/৭০ দশকে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের মাঝে এনিয়ে চলে ব্যাপক গবেষনা৷ এবং তারা এ সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, মানষিক ও শারীরিক উভয় ধরনের রোগ সারাতে মেডিটেশন কার্যকর ভুমিকা রাখতে সম্ভব৷ এসকল গবেষণার মাঝে অনেকটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ডা: হার্বার্ট বেনসন৷ দীর্ঘ গবেষনার পর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তার 'রিলা ক্সেশন রেসপন্স' গ্রন্থে তিনি লেখেন যে, একাগ্র বিশ্বাস নিয়ে মেডিটেশন বা প্রার্থনা করে কিভাবে অনিদ্রা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা এবং ব্যাথা-বেদনায় আক্রান্ত রোগীরা আরোগ্য লাভ করতে পারে৷ তিনি বলেন, উদ্বেগ উত্ক ন্ঠার কারণে যে রোগ-বালাই হয় প্রচলিত চিকিত্সাপয় তাতে খুব একটা কাজ হয় না৷ বরং ৬০_ ৯০% নিরাময় হয় রোগীর বিশ্বাসের কারণে৷ 'আমি সুস্থ হবো' এ বিশ্বাসের ফলে রোগীর দেহের নিউরো-ইমিউনোলজিকেল সিষ্টেম নতুন উদ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠে, বদলে যায় রোগের কোষগত নেতিবাচক স্মৃতি৷ এ বিশ্বাসকে চিকিত্সায় বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'প্লাসিবো ইফেক্ট'৷ তদ্রুপ ক্যালিফোর্নিয়ার কার্ডিওলজিষ্ট ডা: ডীন অরনিশের গবেষণায় বেরিয়ে আসে হৃদরোগ নিরাময়ে মেডিটেশনের কার্যকারিতা৷ বাইপাস সার্জারি বা এনজিও প্যালাস্টি ছাড়াও হৃদরোগের চিকিত্সাে সম্ভব তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন৷ তিনি সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে ৪০ জন গুরুতর হৃদরোগীকে এক বছর ধরে মেডিটেশন যোগব্যায়াম ও কোলস্টরলযুক্ত খাবার গ্রহন করানোর মাধ্যমে হৃদরোগ থেকে মুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন৷ এভাবে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় মেডিটেশন নামক বৈজ্ঞানিক ধ্যান পশ্চিমা সমাজে৷ টাইম ম্যাগাজিনের আগষ্ট ২০০৩ সংখ্যার 'দি সায়েন্স অফ মেডিটেশন' প্রচ্ছদ নিবন্ধে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি মানুষ এখন নিয়মিতভাবে মেডিটেশন করছে৷ বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিরাময়ের জন্যে এই মেডিটেশন চর্চার ব্যাপক প্রচার ঘটছে৷ কিন্তু ব্যতিক্রম হলো আমাদের বাংলাদেশের মেডিটেশন পদ্ধতি যা 'কোয়ান্টম মেথড' নামে প্রসিদ্ধ৷ এখানে নিরাময়ের গন্ডি থেকে বেরিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে৷ নিরাময়ের বিশ্বাসের স্থলে প্রবর্তন করা হয়েছে মুক্ত বিশ্বাস৷ দ্বীন ইসলাম যেভাবে আক্বায়েদ (বিশ্বাস) আ'মাল, মুয়ামালা, মুয়াশারা, ও আখলাক এই পাঁচ ভাগে মানুষকে জীবন বিধান দিয়েছে তদ্রুপ কোয়ান্টম মেথডের মাধ্যমে বর্ণিত সকল ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্ট করা হয়েছে৷ 'সফলতার পঞ্চসূত্র' নামে পাঁচটি মনগড়া বিষয় ঠিক করা হয়েছে সঠিক জীবনদৃষ্টি অর্জনের জন্যে৷ এই জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে যে কোন ধর্মের লোক নিজ ধর্মে অবিচল থেকেও সে হতে পারে এক 'অনন্য মানুষ' ইনসানে কামেল৷ সুখ-শান্তি, সফলতা ও সুসাস্থ্য সবই অর্জন সম্ভব এই সূত্র অবলম্বনে৷


গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক (আসল নাম জানা নেই) বাংলাদেশের এক জন প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী৷ তিনি উদ্ভাবন করেছেন 'কোয়ান্টম মেথড' নামক এই বৈজ্ঞানিক ধ্যান পদ্ধতি৷ যদিও তিনি ডা: বেনসন বা ডা: ডীন অরনিশের মত চিকিত্সা বিদ নন৷ কিন্তু তাদেরই বাতলানো বৈজ্ঞানিক ফর্মূলা থেকে সূত্র সংগ্রহ করে নিজের গবেষণালব্দ জোতির্বিদ্যার বিভিন্ন দর্শন যোগকরে আবিস্কার করেছেন এক আলাদিনের চেরাগ মার্কা ধ্যান মেডিটেশন৷ আবার এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ইসলামও সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্মের লোকদের আকৃষ্ট করতে সকল ধর্মের কিছু কিছু আদর্শ বিশ্বাস ও রিতিনীতির মিশ্রণ করা হয়েছে৷ তাই কোয়ান্টাম মেথড পশ্চিমাদেশে প্রচলিত নিরাময়ের মেডিটেশন পদ্ধতি নয় বরং একটি জীবন ব্যবস্থা ও মতবাদ৷ যেখানে ধ্যান চর্চার নামে বিজ্ঞান ও সকল ধর্ম-মতবাদের সমন্বয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ঠিক অনেকটা বাদশাহ আকবরের দ্বীনে এলাহীর মত একটি কুফরী মতবাদ৷


শহীদ আল-বোখারীর এ প্রচেষ্টার সূচনা হয় প্রায় ৩ যুগ আগে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন মাসিক ঢাকা ডাইজেস্টে অতীন্দ্রিয় বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে৷ ১৯৭৫ সালে তার এবিষয়ক অনেক লেখা প্রকাশিত হয় সপ্তাহিক বিচিত্রায়৷ বাংলাদেশের অকাল্ট অনুরাগীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৭৬ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ এস্ট্রলজার্স৷ ১৯৮০ সালে এই যোগধ্যান চর্চা এক নতুন মাত্রা লাভ করে শান্তিনগরে অফিস স্থাপনের মাধ্যমে৷ এর পর ১৯৮৩ সালে মেডিটেশন জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে যোগ মেডিটেশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়৷ যা ১৯৮৬ সালে যোগ ফাউন্ডেশন নামে রূপান্তরিত হয়৷ ধ্যানের স্তরে পৌঁছার প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যে চলে গবেষনা৷ এভাবে কোয়ান্টমের প্রতিটি টেকনিক নিয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়৷ ৯০ দশকের শুরুতে এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহ করে৷ এরপর সাধারণ লোকের মাঝে এর পরিচিতি তুলে ধরার জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়৷ শহীদ মহাজাতক ১৯৯২ সাল থেকে দৈনিক ইত্তেফাক ও মাসিক উপমা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় শিথিলায়ন ও মেডিটেশন সম্পর্কে লেখা শুরু করেন৷ ১৯৯৩ সাল থেকে মাসিক রহস্য পত্রিকায় দীর্ঘদিন নিয়মিত আত্মনির্মাণ বিভাগে লেখেন৷ সর্ব সাধরণের জন্য ৪ দিনের কোর্স চালু করা হয় সর্ব প্রথম ১৯৯৩ এর ৭ জানুয়ারী হোটেল সোনারগাঁওএ৷ এর পর দীর্ঘ ১৭ বছরে বর্তমান ৩০০ এর অধিক কোর্স পরিচালনা করেন তিনি নিজেই৷ আমাদের দেশের লাখ লাখ লোক এ যাবত তার কাছে কোর্স গ্রহণ করেছে৷ মূলত বিভিন্ন শারীরিক ও মানষিক সমস্যায় জর্জরীতরাই তার কাছে যায় নিরাময়ের আশায়৷ কিন্তু নিরাময়ের নামে তাদেরকে দিক্ষা দেয়া হয় নতুন এই মতবাদের৷ অনেকের কাছে তার কর্মকান্ড ইসলাম বিরোধী মনে হয়ে থাকে৷ কিন্তু তাদের এই সন্দেহ দুর করার জন্য সেখানে রয়েছে জ্ঞানপাপী দরবারী আলেম৷ যিনি কোয়ান্টামের সকল কুফরী মতবাদকে শরীয়ত সম্মত বলে চালিয়ে দেন৷ বাদশাহ আকবরের দরবারে যেমনটি করতেন মাও: আবুল ফজল৷ তবে একোর্সে আগত লোকেরা সবচেয়ে বিব্রতবোধ করেন সব ধর্মের লোককে এক সাথে বাইয়াত করে মুরিদ বানানোর মুহুর্তে৷ কিন্তু তবুও তাদের মোহ ভাঙ্গেনা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়৷ আজ মুসলমানদের সব চেয়ে বিপদের কারণ হচ্ছে এই ধমর্ীয় অজ্ঞতা৷ বৈষয়িক জ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জনে কমতি নেই কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখেনা বা প্রয়োজন মনে করে না৷


ইসলাম আর কুফরের মাঝে ব্যবধান হচ্ছে কিছু অকি্বদা-বিশ্বাস ও আমল বা আচার আচরন৷ আকি্বদা বিশ্বাসে গড়মিল হলেই মানুষ ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়৷ কোয়ান্টাম সকল ধর্মের প্রতি উদারতা বা সমন্বয় করতে গিয়ে ইসলামের মৌলিক আকি্বদা বিশ্বাস কে বিসর্জন দিয়েছে অতি কৌশলে, যা সকলের পক্ষে বুঝা সম্ভব হয় না৷ কোয়ান্টামের জীবনদৃষ্টি অনুসরণ করে ধ্যান চর্চার মাধ্যমে অনেকের উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার যে কথা শুনা যায় তা অসম্ভব কিছু নয়৷ কিন্তু মনে করতে হবে, কোন জিনিস উপকারী হলেই তা বৈধ বা শরীয়ত সম্মত হয় না বরং বৈধতার বিষয়টি কোরআন-হাদীসের বিধি বিধানের উপর নির্ভর করে৷ যুয়া ও মদের কথাই ধরুন, কোরআন করীমেই এতদুভয়ের উপকারিতার কথা স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু তাই বলে হালাল করা হয়নি৷ (বাকারা ২৯৯) বুঝা গেল উপকারী হলেই হালাল হয় না৷ কোয়ান্টামের কার্যক্রম ও মতাদর্শ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এর অসংখ্যা বক্তব্য সরাসরী কোরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক৷ এখানে সংক্ষেপে তার কয়েকটি আলোচনা পেশ করা হল৷

(ক) কোয়ান্টাম কোর্স করতে প্রথমে একটি প্রত্যয়ন পাঠ করানো হয়৷ এই প্রত্যয়নই হলো কোয়ান্টামের মূল চালিকা শক্তি৷ যেখানে বলা হয় "অসীম শক্তির অধিকারী আমার মন, যা চাই তাই পাবো, যা খুশি তাই নেব"৷ অর্থাত্‍ কোয়ান্টামের বিশ্বাস হল সকল শক্তির উত্সা মানুষের মন৷ (নাউযুবিল্লাহ) পক্ষান্তরে কোরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী সকল ক্ষমতা ও শক্তির উত্সন মহান রাব্বুল আলামীন৷ তিনি চাইলে হয়, নতুবা হয় না৷ মানুষ কোন কিছু আল্লাহর দান ছাড়া অর্জন করতে পারে না৷ আল্লাহ পাক ছাড়া সব কিছু সসীম, একমাত্র তিনিই অসীম৷ মনের শক্তিকে অসীম বলা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা৷ পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে "সবকিছু আল্লাহর মুষ্টি বলয়ে"৷ (সূরা নিসা-১২৬) "তোমরা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না৷ (সূরা আত তাকভীর-২৯) "মানুষ যা চায় তাই কি পায়? অতএব পরবতর্ী ও পূর্ববতী সব মঙ্গলই আল্লাহর হাতে৷ (সূরা আন নজম ২৪-২৫)
(খ) ইসলামের মাঝে একটি ভ্রান্ত দল অতিবাহিত হয়েছে যাদের কে ক্বাদরিয়া বলা হতো৷ এরা তাক্বদীরকে অস্বীকার করত এবং মানুষকে ক্বাদেরে মতলক তথা সাধীন ও সর্বশক্তির অধিকারী মনে করত৷ মানুষের সকল কাজের স্রষ্টা মানুষ নিজেই বলে বিশ্বাস করত৷ কোয়ান্টামের মুক্ত বিশ্বাসের মাধ্যমেও তাক্বদীর তথা ভাগ্যের লিখনিকে অস্বীকার করা হয়েছে৷ এবং মানুষকে ভাগ্য বিধাতা বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ কোয়ান্টামের প্রসিদ্ধ উদাহরন সার্কাসের হাতির কথাই ধরা যাক৷ ''জঙ্গল থেকে হস্তি শিশুকে ধরে এনে লোহার ৬ ফুট শিকল দিয়ে বেধে রাখতে রাখতে সে বড় হয়েও ৬ ফুট বৃত্তকে তার নিয়তি মনে করে৷ অথচ এখন সে বড়, তার দেহের প্রচন্ড শক্তি দিয়ে এক ঝটকায় শিকল ভেঙ্গে মুক্ত হতে পারে৷ কিন্তু মনোজাগতিক নিয়তির শৃঙ্খল তাকে পরিনত করে অসহায় প্রাণীতে৷ এমনকি সার্কাসে আগুন লাগলে হাতি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিন্তু মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেনা''৷

কোয়ান্টামের এই উদাহরণ দ্বারা নিয়তির শৃঙ্খল ভেঙ্গে বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এবং তাক্বদীরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও মনোজাগতিক শৃঙ্খল আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ যা সরাসরি কোরআন হাদীস অস্বিকারের শামীল৷ ইসলাম বলে তাক্বদীরের ভাল মন্দ আলল্লহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত৷ হাদীসে জীবরাঈলে যে সকল বিষয়ে ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে তাক্বদীর বা ভাগ্যের লেখন৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে হাত গুটিয়ে বসে থাকা বরং আল্লাহর আদেশ নিষেধমেনে চলতে থাকতে হবে এবং সত্পয়থে থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে৷ আর বিশ্বাস রাখতে হবে ভাগ্যের লেখনের উপর৷ ছাহাবায়ে কেরাম নবীজী (সা) কে এব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন যে, তবে আমল করে কি হবে? উত্তরে নবীজী (সা বলেন, ''প্রত্যেকের জন্য তাই সহজ হয় যে জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে''৷ হযরত আলী (রা কে কেউ তাক্বদীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেন এক পা উঠাও লোকটি উঠালো৷ এর পর বললেন অপর পা উঠাও তখন সে অপারগতা প্রকাশ করল৷ এটাই হলো তাক্বদীর, মানুষ এক কদম বাড়াতে পারে কিন্তু চুড়ান্ত কিছু করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া৷ সার্কাসের হাতির মত হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কথাও ইসলাম বলে না, আবার কোয়ান্টামের মত নিয়তির শিকল ভেঙ্গে ফেলার কথাও বলে না৷ ইসলামের শিক্ষা হল, মানুষ চেষ্টার মালিক আল্লাহ দেবার মালিক৷ তিনি মঞ্জুর করলে বান্দার চেষ্টা সফল হবে অন্যথায় হবে না৷


কোয়ান্টাম বলে "মানুষ নিজেই পারে নিজের সব কিছু বদলে দিতে৷ রোগকে সুস্থতায়, অভাবকে প্রাচুর্যে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা মানুষের মধ্যেই রয়েছে৷'' পক্ষান্তরে ইসলাম বলে হায়াত-মউত, সুস্থতা-অসুস্থতা, রিযিক, দৌলত বা মান সম্মান সব কিছুরই মালিক আল্লাহ৷ এসব বিষয় আল্লাহর ইচ্ছাধীন, মানুষ এতে কোন রদ বদল করার ক্ষমতা রাখেনা৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ''যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন, যিনি আমার মৃতু্য ঘটাবেন অতঃপর পুনজর্ীবন দান করবেন৷ (সূরা শোয়ারা ৮০-১৮) ''তারা কি দেখেনা যে আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন৷ নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সমপ্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে৷ (সূরা রূম ৩৭) ''তুমি বল আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন৷ (সূরা ইউনুস ৪৯) কাজেই মানুষ নিজেই পারে সব কিছু বদলে দিতে কোয়ান্টামের এমন বিশ্বাস কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থি৷


(গ) কোয়ান্টামের মতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইসলাম সকল ধর্মের মূল শিক্ষা এক৷ কাজেই যে কোন ধর্ম পালনই যথেষ্ট৷ কোয়ান্টমের দৃষ্টিতে সকল ধর্মই গ্রহণযোগ্য৷ (কোয়ান্টাম উচ্ছাস পৃ:৯) পক্ষান্তরে কোরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম৷ বাকী সব ধর্ম কুফরী মতবাদ ও ভ্রান্ত৷ কোরআন পাকে বলা হয়েছে : ''নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য দ্বীন এক মাত্র ইসলাম''৷ (সূরা আলেইমরান ১৯) ''যে লোক ইসলাম ছাড়া কোন ধর্ম তালাশ করে কস্মিন কালেও তা গ্রহণ করা হবে না৷ এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত৷ (আলেইমরান ৮৫) তাছাড়া স্রষ্টার সত্ত্বা ও গুনাবলীর সংজ্ঞা প্রত্যেক ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন৷ খৃষ্টানরা তৃত্ববাদে বিশ্বাসী৷ তাদের মতে পিতা, পুত্র ও মেরী এই তিন প্রভু মিলে হয় গড৷ হিন্দুরা ব্রক্ষা, বিষু ও শিব এই তিনের সমষ্টি ওঁম এর পূজারী৷ তাছাড়াও তাদের রয়েছে ৩৩ কোটি দেব-দেবী, এবং তারা ভগমানের জন্ম-মৃতু্য ও জয়-পরাজয়ে বিশ্বাসী৷ বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই, সব কিছু প্রকৃতিগত ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে৷ আর ইসলাম বলে আল্লাহ এক, অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি৷ এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই৷ অর্থাত্‍ ইসলাম একমাত্র একত্ববাদের ধর্ম, বাকী সব বহু ইশ্বরবাদ অথবা নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী৷ স্রষ্টাকে নিয়েই যেখানে এত মত ভেদ সেখানে ধর্মের মূল শিক্ষা বলতে আর কি বাকী থাকে?! তাই কোয়ান্টাম সকল ধর্মের মূল শিক্ষা এক বলে যে মতবাদ প্রকাশ করেছে তা একটি অবাস্তব ও কুফুরী মতবাদ৷


(ঘ) ''কোয়ান্টাম প্রত্যেককে উত্সাাহিত করে আন্তরিক ভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনে''৷ (কোয়ান্টাম উচ্ছ্বাস-পৃ: ১৪৩) কোয়ান্টামের এই ঘোষণা বা উত্সাাহ প্রদান খোদাদ্রোহীতার শামিল৷ কেননা আল্লাহ পাক সকল আহলে কিতাব, মুশরিক ও পৌত্তলিকদের কোরআনের মাধ্যমে বার বার ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিজ কুফুরী ধর্মে অটল থাকার ভয়াবহ পরিনতির কথা বুঝিয়েছেন৷ এর বিপরিত কোয়ান্টাম প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনে উত্সাবহ প্রদান করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে৷ ইসলামের দিকে আহ্বান করে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে৷ '' আর আহলে কিতাবরা যদি ঈমান আনতো তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গল হতো৷'' (আলইমরান-১১০) ''আর যদি আহলে কিতাবরা বিশ্বাস স্থাপন করত এবং খোদাভীতি অবলম্বন করত তবে আমি তাদের মন্দ বিষয় সমূহ ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নেয়ামতের উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করতাম'' (মায়েদা-৬৫) আর ইসলাম গ্রহণ ছাড়া মৃতু্যবরণ করলে পরিনতি কি হবে তাও বলা হয়েছে, ''যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না৷ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব৷ পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহয্যকারী নেই৷'' (আলইমরাম-৯১)


পবিত্র কোরআনের এধরনের স্পষ্ট বক্তব্যের পরে কেউ যদি মানুষকে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম পালনে উত্সা হ প্রদান করে তাহলে তা কিছুতেই মানুষের মঙ্গল কামনা হতে পারে না বরং তা হবে প্রবৃত্তি পঁূজা ও ধোকাবাজী৷ সব ধর্মের লোককে খুশি করার মাঝে কোয়ান্টামে কি স্বার্থ রয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়৷ এধরনের মতাদর্শের অনুসরণ করে মানুষ দুনিয়াতে কিছু পেলে পেতে পারে তবে পরে কালে রিক্তহস্ত হওয়া নিশ্চিত৷ এখন যদি কেউ পরকালেই বিশ্বাসী না হয় তবে তাকে বুঝানোই বেকার৷


(ঙ) কোয়ান্টাম যেহেতু সবধর্ম সমন্বয় দর্শনের প্রবক্তা তাই সে সব ধর্মের কিছু কিছু ধর্ম বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছে৷ যেমন বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টা নেই তাই মানুষকে কেউ সৃষ্টিও করে নাই বরং মানুষের জন্ম মৃতু্য একটি প্রাকৃতিক প্রবাহের মত অনবরত প্রবাহিত হয়ে চলছে৷ এখানে কেউ কাউকে সৃষ্টি করেনি৷ বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের আদিও অন্ত নেই৷ (ইসলামী আক্বীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ: ৬৬০) কোয়ান্টাম বৌদ্ধ ধর্মের এই মতকে গ্রহণ করে নিজেও হুবহু একই পোষণ করেছে৷ কোয়ান্টাম কনিকার ১৫ নং পৃষ্টায় বলা হয়েছে ''আপনি কসমিক ট্রাভেলার- মহাজাগতিক মুসাফির৷ আপনার জন্ম নেই মৃতু্য নেই৷'' জন্ম যদি না থাকে তাহলে জন্মদাতা ছাড়াই মানুষ অস্তিত্য লাভ করেছে৷ তার মানে প্রাকৃতিক ভাবেই সব হচ্ছে স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই৷ (নাউযুবিল্লাহ) একই পুস্তকে ২১ নং পৃষ্টায় বলা হয়েছে যা বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাস৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে '' আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অত:পর রিযিক দিয়েছেন, এর পর তোমাদের মৃতু্য দিবেন, এর পর তোমাদের জীবিত করবেন৷ তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে এসব কাজের মধ্যে কোন একটিও করতে পারে? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান৷'' (সূরা রূম -৪০) ''কল্যাণময় তিনি যিনি নভমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন৷ এবং এতে রেখেছেন সূর্যও দীপ্তিময় চন্দ্র৷ (ফোরকান -৬১) কথা অনেক লম্বা হয়ে গেল তাই আর দীর্ঘ না করে যারা কোয়ান্টম কোর্স করতে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে দু'একটি কথা বলেই শেষ করছি৷ শহীদ আল বোখারী এক জন জ্যোতিষী ও স্বঘোষিত সর্বদ্রষ্টা৷ (নাউযুবিল্লাহ) ইসলামে এধরনের জ্যোতিষ বিদ্যা ও অতীন্দ্রিয় বিদ্যার চর্চা সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে৷ কোয়ান্টামের কমান্ড সেন্টার অধ্যায়ে যা কিছু শেখানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ঈমান বিধ্বংসি৷ আপনারা হয়ত জানেন না যে, এধরনের জ্যোতিষীদের কাছে গমন হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী ঈমান বিনাশী৷ নবীজী (সা বলেন ''যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গমন করল এবং তার কথাকে প্রত্যায়ন করল সে যেন মোহাম্মদের উপর অবতীর্ণ দ্বীনকে অস্বীকার করল৷" অপর হাদীসে বলা হয়েছে, ''যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে কোন বিষয় জানতে চাইলে তার ৪০ দিনের নামায কবুল করা হবে না৷ (সুনানুল কুবরা- ৮/১৩৮) অতএব কোয়ান্টামের এসকল ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ড ও কুফরী মতবাদ থেকে বেঁচে থাকা সকলের কর্তব্য৷

 Source: http://www.amarbornomala.com