Friday, July 27, 2012

নতুন আয়ের ক্ষেত্র জিমনেশিয়াম

নতুন আয়ের ক্ষেত্র জিমনেশিয়াম

রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা লক্ষ্যণীয়। এই বাস্তবতাকে অবলম্বন করে শুরু হয়েছে শরীরচর্চা বা জিমনেশিয়াম স্থাপন। অন্য পেশার পাশাপাশি এর মাধ্যমেও আয় হচ্ছে কিছু বাড়তি রোজগার। বিভিন্ন জিমনেশিয়াম ঘুরে প্রতিবেদনটি লিখেছেন _শামছুল হক রাসেল


বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন আয়ের উৎস বা ক্ষেত্র হতে পারে জিমনেশিয়াম। গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার আশায় বসে না থেকে ভিন্নধর্মী এ পেশায় খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায় নিজের ভাগ্য। অনেকেই টাকা থাকা সত্ত্বেও তা বিনিয়োগের সঠিক জায়গা খুঁজে পান না। তাদের জন্য চমৎকার একটি ক্ষেত্র হতে পারে এই শরীরচর্চা কেন্দ্র বা জিমনেশিয়াম। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যবসা বা উদ্যোগ অনেকটাই নতুন। মানুষের মধ্যে আগের তুলনায় এখন স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বেশ সচেতন। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী নেই শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের জায়গা। আর এই সুযোগকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন। প্রাথমিক শুরু : শরীরচর্চা কেন্দ্র ঘিরেই জমে উঠতে পারে আপনার ব্যবসা। এ জন্য আপনাকে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বড় পরিসরে শুরু করতে না চাইলে স্বল্প পরিসরেও শুরু করতে পারেন। নিজে জিম স্থাপনের আগে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি জিম ঘুরে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে জিমের মালিক ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এতে একটি ভালো ধারণা আসবে। জিমনেশিয়ামে সদস্যরা সাধারণত আসে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, মডেল ফিগার তৈরি করা, বডি বিল্ডআপ করা ও মেদ বা ওজন কমানোর জন্য। মূলত এ চার ধরনের সদস্যকে লক্ষ্য রেখেই এগুতে হবে। স্থান নির্বাচন : জিমনেশিয়ামের জন্য স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল করলে চলবে না। স্থান বা জায়গা নির্বাচনই আসল কথা। খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যাবে এমন স্থান বেছে নিতে হবে। গ্রাহকদের যাতায়াতে সুবিধা হবে এ রকম জায়গা হলে ভালো। জিমের বেশিরভাগ গ্রাহকই তরুণ। তাই তরুণরা বেশি যাতায়াত করে এমন একটি স্থানে জিমনেশিয়াম স্থাপন করতে পারেন। প্রচারেই প্রসার : জিম স্থাপনের আগে এলাকার তরুণদের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন বা তাদের মতামত, আগ্রহ এসব বিষয় যাচাই করে দেখতে পারেন। জিমনেশিয়াম স্থাপনের পর তার একটি সুন্দর নাম ঠিক করুন। তারপর একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিন। এলাকায় পোস্টারিং, লিফলেট, ব্যানার প্রভৃতির মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানের প্রচার করতে পারেন। এলাকায় বেশি চলে এ রকম কোনো দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতে পারেন। আর তা সম্ভব না হলে দৈনিক পত্রিকাগুলোর ভেতর প্রচারপত্র ঢুকিয়ে তা বিলি করতে পারেন হকারের মাধ্যমে। পত্রিকার হকারদের কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই তারা এ ব্যবস্থা করে দেবে। উপকরণ ও অবকাঠামো : একটি জিমনেশিয়ামের জন্য ট্রেডমিল, সাইক্লিং, পুশআপ বার, ডাম্বেলসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। ট্রেডমিলের দাম ৫০ হাজার থেকে ছয় লাখ টাকা। পুশআপ বার ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সাইক্লিং সাড়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার, ক্রস ট্রেইনার পাঁচ থেকে আট হাজার, স্টেপার ছয় থেকে ১০ হাজার এবং স্মিথ স্কট ও ক্রসবার পাওয়া যাবে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বারবেল ও ডাম্বেল কিনতে হয় কেজি হিসেবে। লেট পুল ডাইন ৬০ থেকে ৭০ হাজার, লেগ প্রেস মেশিন ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং অলিম্পিক বার বেঞ্চ প্রেস, অলিম্পিক বেঞ্চ ইনক্লায়েন্ট, ডিকলায়েন্ট প্রভৃতি পাওয়া যাবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। শরীর গরম করার স্যনা মেশিনের দাম পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। টি-বারের দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, শোল্ডার প্রেস মেশিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার ও স্টিম বাথ পাওয়া যাবে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। যেখানে পাবেন : এ সেক্টরের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি আসে চীন ও তাইওয়ান থেকে। তবে আমাদের দেশেও কিছু সরঞ্জাম তৈরি হয়। স্টেডিয়াম মার্কেট ছাড়াও ঢাকার গুলশান, বনানীর অভিজাত দোকানগুলোয় এসব ব্যায়ামের সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। আর এসব যন্ত্রপাতি কেনার সময় দক্ষ বা অভিজ্ঞ কোনো ট্রেইনারকে সঙ্গে রাখতে হবে। যা যা লাগবে : একটি জিমনেশিয়াম ভালোভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই দু'জন প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হবে। এদের মধ্যে একজন প্রধান প্রশিক্ষক, তিনি সদস্যদের রুটিন করে দেবেন। আর একজন প্রশিক্ষক যিনি থাকবেন তিনি রুটিন অনুসারে সদস্যদের শরীরচর্চা দেখিয়ে দেবেন। এ ছাড়া সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য আরও দুই-তিনজন কর্মীর প্রয়োজন। জিমনেশিয়ামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা সম্ভব না হলে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। জিমের অনেক যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎচালিত, তাই লোডশেডিং থেকে রক্ষা পেতে রাখতে হবে জেনারেটর। 

 

Thursday, July 26, 2012

প্রচলিত কোয়ান্টাম মেথড ও ইসলামের মোরাকাবা পদ্ধতি

প্রচলিত কোয়ান্টাম মেথড ও ইসলামের মোরাকাবা পদ্ধতি

- লিখেছেন রিজওয়ান জমীরাবাদী

 মুরাকাবা ইলমে তাসাওউফের একটি প্রসিদ্ধ অধ্যায়৷ যুগ যুগ ধরে ওলি আউলিয়াদের মাঝে এর চচর্া হয়ে আসছে৷ মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার ভালবাসা জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করাই এর উদ্দেশ্য৷ সদা এক আল্লাহর স্মরণ অন্তরে থাকলে মানুষের পক্ষে তাঁর নাফরমানী সম্ভব নয়৷ মুরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাকে দেখছেন এবং আমার সাথে আছেন এই বোধ জাগ্রত করে তোলারই চেষ্টা হয়৷ প্রসিদ্ধ হাদীসে জিব্রাঈলে যাকে 'ইহসান' বলে সঙ্গায়ীত করা হয়েছে৷ ''তুমি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত কর যেন তুমি তাকে দেখছ, আর তুমি তাকে দেখতে না পেলেও তিনি তোমাকে দেখছেন''৷ মুরাকাবার মাঝে মনকে সকল ধরনের চিন্তা মুক্ত করে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুধু মাত্র একটি বিষয়ে ভাবা হয়৷ এবং লাগাতার দীর্ঘ সময় ধরে অনবরত কল্পনা করা হয়৷

ইসলামের এই মুরাকাবার ন্যায় অন্যান্য ধর্মের সাধকদের মাঝেও আত্মশুদ্ধি লাভের জন্য মন নিয়ন্ত্রনের সাধনা করতে দেখা যায়৷ হিন্দু যোগীদের যোগ্যধ্যান এবং বৌদ্ধদের বিপাসন ধ্যান এর অন্যতম৷ তবে মুসলমান সূফী-ওলীদের মুরাকাবা আর অমুসলিমদের ধ্যান বা যোগ সাধনার মাঝে তফাত সাত সমুদ্রের৷ কারণ প্রত্যেকেই এর রিয়াযত মুজাহাদা বা সাধনা করে থাকে নিজ নিজ ধর্মের আকি্বদা-বিশ্বাস ও রিতিনীতির অনুসরণে৷ ইসলাম একমাত্র একত্ববাদের ধর্ম আর বাকী সব বহু ইশ্বরবাদে বিশ্বাসী বা নাস্তিক যেমন হিন্দু বৌদ্ধ সমাজ৷ কাজেই ধ্যানের ক্ষেত্রেও এসকল বিশ্বাসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়৷


ধ্যান- মুরাকাবার মৌলিক উত্সে র মাঝে গবেষনা করে পশ্চিমা চিকিত্সার বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন মন নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি, যার নামকরণ করা হয়েছে 'মেডিটেশন'৷ তাদের গবেষনায় বের হয়ে এসেছে মন-মস্তিস্কের মাঝে ধ্যানের প্রভাব৷ তারা দেখতে পেয়েছে যে ধ্যানের মাধ্যমে মানুষের মনে যে বিষয় গেথে দেয়া হয় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সে অনুসারে পরিচালিত হয়৷ অথর্াত্‍ মনের বিশ্বাস অন্য অঙ্গকে প্রভাবিত করে৷ রোগ মুক্তি ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই ধ্যানের ফরমূলা অনুসরণ করে এক জন রোগীর মনের অবস্থা পরিবর্তন করা গেলে অনেকটা সফলতা পাওয়া যাবে৷ ৬০/৭০ দশকে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের মাঝে এনিয়ে চলে ব্যাপক গবেষনা৷ এবং তারা এ সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, মানষিক ও শারীরিক উভয় ধরনের রোগ সারাতে মেডিটেশন কার্যকর ভুমিকা রাখতে সম্ভব৷ এসকল গবেষণার মাঝে অনেকটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ডা: হার্বার্ট বেনসন৷ দীর্ঘ গবেষনার পর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তার 'রিলা ক্সেশন রেসপন্স' গ্রন্থে তিনি লেখেন যে, একাগ্র বিশ্বাস নিয়ে মেডিটেশন বা প্রার্থনা করে কিভাবে অনিদ্রা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা এবং ব্যাথা-বেদনায় আক্রান্ত রোগীরা আরোগ্য লাভ করতে পারে৷ তিনি বলেন, উদ্বেগ উত্ক ন্ঠার কারণে যে রোগ-বালাই হয় প্রচলিত চিকিত্সাপয় তাতে খুব একটা কাজ হয় না৷ বরং ৬০_ ৯০% নিরাময় হয় রোগীর বিশ্বাসের কারণে৷ 'আমি সুস্থ হবো' এ বিশ্বাসের ফলে রোগীর দেহের নিউরো-ইমিউনোলজিকেল সিষ্টেম নতুন উদ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠে, বদলে যায় রোগের কোষগত নেতিবাচক স্মৃতি৷ এ বিশ্বাসকে চিকিত্সায় বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'প্লাসিবো ইফেক্ট'৷ তদ্রুপ ক্যালিফোর্নিয়ার কার্ডিওলজিষ্ট ডা: ডীন অরনিশের গবেষণায় বেরিয়ে আসে হৃদরোগ নিরাময়ে মেডিটেশনের কার্যকারিতা৷ বাইপাস সার্জারি বা এনজিও প্যালাস্টি ছাড়াও হৃদরোগের চিকিত্সাে সম্ভব তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন৷ তিনি সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে ৪০ জন গুরুতর হৃদরোগীকে এক বছর ধরে মেডিটেশন যোগব্যায়াম ও কোলস্টরলযুক্ত খাবার গ্রহন করানোর মাধ্যমে হৃদরোগ থেকে মুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন৷ এভাবে ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় মেডিটেশন নামক বৈজ্ঞানিক ধ্যান পশ্চিমা সমাজে৷ টাইম ম্যাগাজিনের আগষ্ট ২০০৩ সংখ্যার 'দি সায়েন্স অফ মেডিটেশন' প্রচ্ছদ নিবন্ধে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি মানুষ এখন নিয়মিতভাবে মেডিটেশন করছে৷ বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিরাময়ের জন্যে এই মেডিটেশন চর্চার ব্যাপক প্রচার ঘটছে৷ কিন্তু ব্যতিক্রম হলো আমাদের বাংলাদেশের মেডিটেশন পদ্ধতি যা 'কোয়ান্টম মেথড' নামে প্রসিদ্ধ৷ এখানে নিরাময়ের গন্ডি থেকে বেরিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে৷ নিরাময়ের বিশ্বাসের স্থলে প্রবর্তন করা হয়েছে মুক্ত বিশ্বাস৷ দ্বীন ইসলাম যেভাবে আক্বায়েদ (বিশ্বাস) আ'মাল, মুয়ামালা, মুয়াশারা, ও আখলাক এই পাঁচ ভাগে মানুষকে জীবন বিধান দিয়েছে তদ্রুপ কোয়ান্টম মেথডের মাধ্যমে বর্ণিত সকল ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্ট করা হয়েছে৷ 'সফলতার পঞ্চসূত্র' নামে পাঁচটি মনগড়া বিষয় ঠিক করা হয়েছে সঠিক জীবনদৃষ্টি অর্জনের জন্যে৷ এই জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে যে কোন ধর্মের লোক নিজ ধর্মে অবিচল থেকেও সে হতে পারে এক 'অনন্য মানুষ' ইনসানে কামেল৷ সুখ-শান্তি, সফলতা ও সুসাস্থ্য সবই অর্জন সম্ভব এই সূত্র অবলম্বনে৷


গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক (আসল নাম জানা নেই) বাংলাদেশের এক জন প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী৷ তিনি উদ্ভাবন করেছেন 'কোয়ান্টম মেথড' নামক এই বৈজ্ঞানিক ধ্যান পদ্ধতি৷ যদিও তিনি ডা: বেনসন বা ডা: ডীন অরনিশের মত চিকিত্সা বিদ নন৷ কিন্তু তাদেরই বাতলানো বৈজ্ঞানিক ফর্মূলা থেকে সূত্র সংগ্রহ করে নিজের গবেষণালব্দ জোতির্বিদ্যার বিভিন্ন দর্শন যোগকরে আবিস্কার করেছেন এক আলাদিনের চেরাগ মার্কা ধ্যান মেডিটেশন৷ আবার এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ইসলামও সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্মের লোকদের আকৃষ্ট করতে সকল ধর্মের কিছু কিছু আদর্শ বিশ্বাস ও রিতিনীতির মিশ্রণ করা হয়েছে৷ তাই কোয়ান্টাম মেথড পশ্চিমাদেশে প্রচলিত নিরাময়ের মেডিটেশন পদ্ধতি নয় বরং একটি জীবন ব্যবস্থা ও মতবাদ৷ যেখানে ধ্যান চর্চার নামে বিজ্ঞান ও সকল ধর্ম-মতবাদের সমন্বয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ঠিক অনেকটা বাদশাহ আকবরের দ্বীনে এলাহীর মত একটি কুফরী মতবাদ৷


শহীদ আল-বোখারীর এ প্রচেষ্টার সূচনা হয় প্রায় ৩ যুগ আগে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন মাসিক ঢাকা ডাইজেস্টে অতীন্দ্রিয় বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে৷ ১৯৭৫ সালে তার এবিষয়ক অনেক লেখা প্রকাশিত হয় সপ্তাহিক বিচিত্রায়৷ বাংলাদেশের অকাল্ট অনুরাগীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৭৬ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ এস্ট্রলজার্স৷ ১৯৮০ সালে এই যোগধ্যান চর্চা এক নতুন মাত্রা লাভ করে শান্তিনগরে অফিস স্থাপনের মাধ্যমে৷ এর পর ১৯৮৩ সালে মেডিটেশন জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে যোগ মেডিটেশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়৷ যা ১৯৮৬ সালে যোগ ফাউন্ডেশন নামে রূপান্তরিত হয়৷ ধ্যানের স্তরে পৌঁছার প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যে চলে গবেষনা৷ এভাবে কোয়ান্টমের প্রতিটি টেকনিক নিয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়৷ ৯০ দশকের শুরুতে এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহ করে৷ এরপর সাধারণ লোকের মাঝে এর পরিচিতি তুলে ধরার জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়৷ শহীদ মহাজাতক ১৯৯২ সাল থেকে দৈনিক ইত্তেফাক ও মাসিক উপমা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় শিথিলায়ন ও মেডিটেশন সম্পর্কে লেখা শুরু করেন৷ ১৯৯৩ সাল থেকে মাসিক রহস্য পত্রিকায় দীর্ঘদিন নিয়মিত আত্মনির্মাণ বিভাগে লেখেন৷ সর্ব সাধরণের জন্য ৪ দিনের কোর্স চালু করা হয় সর্ব প্রথম ১৯৯৩ এর ৭ জানুয়ারী হোটেল সোনারগাঁওএ৷ এর পর দীর্ঘ ১৭ বছরে বর্তমান ৩০০ এর অধিক কোর্স পরিচালনা করেন তিনি নিজেই৷ আমাদের দেশের লাখ লাখ লোক এ যাবত তার কাছে কোর্স গ্রহণ করেছে৷ মূলত বিভিন্ন শারীরিক ও মানষিক সমস্যায় জর্জরীতরাই তার কাছে যায় নিরাময়ের আশায়৷ কিন্তু নিরাময়ের নামে তাদেরকে দিক্ষা দেয়া হয় নতুন এই মতবাদের৷ অনেকের কাছে তার কর্মকান্ড ইসলাম বিরোধী মনে হয়ে থাকে৷ কিন্তু তাদের এই সন্দেহ দুর করার জন্য সেখানে রয়েছে জ্ঞানপাপী দরবারী আলেম৷ যিনি কোয়ান্টামের সকল কুফরী মতবাদকে শরীয়ত সম্মত বলে চালিয়ে দেন৷ বাদশাহ আকবরের দরবারে যেমনটি করতেন মাও: আবুল ফজল৷ তবে একোর্সে আগত লোকেরা সবচেয়ে বিব্রতবোধ করেন সব ধর্মের লোককে এক সাথে বাইয়াত করে মুরিদ বানানোর মুহুর্তে৷ কিন্তু তবুও তাদের মোহ ভাঙ্গেনা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়৷ আজ মুসলমানদের সব চেয়ে বিপদের কারণ হচ্ছে এই ধমর্ীয় অজ্ঞতা৷ বৈষয়িক জ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জনে কমতি নেই কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখেনা বা প্রয়োজন মনে করে না৷


ইসলাম আর কুফরের মাঝে ব্যবধান হচ্ছে কিছু অকি্বদা-বিশ্বাস ও আমল বা আচার আচরন৷ আকি্বদা বিশ্বাসে গড়মিল হলেই মানুষ ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়৷ কোয়ান্টাম সকল ধর্মের প্রতি উদারতা বা সমন্বয় করতে গিয়ে ইসলামের মৌলিক আকি্বদা বিশ্বাস কে বিসর্জন দিয়েছে অতি কৌশলে, যা সকলের পক্ষে বুঝা সম্ভব হয় না৷ কোয়ান্টামের জীবনদৃষ্টি অনুসরণ করে ধ্যান চর্চার মাধ্যমে অনেকের উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার যে কথা শুনা যায় তা অসম্ভব কিছু নয়৷ কিন্তু মনে করতে হবে, কোন জিনিস উপকারী হলেই তা বৈধ বা শরীয়ত সম্মত হয় না বরং বৈধতার বিষয়টি কোরআন-হাদীসের বিধি বিধানের উপর নির্ভর করে৷ যুয়া ও মদের কথাই ধরুন, কোরআন করীমেই এতদুভয়ের উপকারিতার কথা স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু তাই বলে হালাল করা হয়নি৷ (বাকারা ২৯৯) বুঝা গেল উপকারী হলেই হালাল হয় না৷ কোয়ান্টামের কার্যক্রম ও মতাদর্শ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এর অসংখ্যা বক্তব্য সরাসরী কোরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক৷ এখানে সংক্ষেপে তার কয়েকটি আলোচনা পেশ করা হল৷

(ক) কোয়ান্টাম কোর্স করতে প্রথমে একটি প্রত্যয়ন পাঠ করানো হয়৷ এই প্রত্যয়নই হলো কোয়ান্টামের মূল চালিকা শক্তি৷ যেখানে বলা হয় "অসীম শক্তির অধিকারী আমার মন, যা চাই তাই পাবো, যা খুশি তাই নেব"৷ অর্থাত্‍ কোয়ান্টামের বিশ্বাস হল সকল শক্তির উত্সা মানুষের মন৷ (নাউযুবিল্লাহ) পক্ষান্তরে কোরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী সকল ক্ষমতা ও শক্তির উত্সন মহান রাব্বুল আলামীন৷ তিনি চাইলে হয়, নতুবা হয় না৷ মানুষ কোন কিছু আল্লাহর দান ছাড়া অর্জন করতে পারে না৷ আল্লাহ পাক ছাড়া সব কিছু সসীম, একমাত্র তিনিই অসীম৷ মনের শক্তিকে অসীম বলা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা৷ পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে "সবকিছু আল্লাহর মুষ্টি বলয়ে"৷ (সূরা নিসা-১২৬) "তোমরা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না৷ (সূরা আত তাকভীর-২৯) "মানুষ যা চায় তাই কি পায়? অতএব পরবতর্ী ও পূর্ববতী সব মঙ্গলই আল্লাহর হাতে৷ (সূরা আন নজম ২৪-২৫)
(খ) ইসলামের মাঝে একটি ভ্রান্ত দল অতিবাহিত হয়েছে যাদের কে ক্বাদরিয়া বলা হতো৷ এরা তাক্বদীরকে অস্বীকার করত এবং মানুষকে ক্বাদেরে মতলক তথা সাধীন ও সর্বশক্তির অধিকারী মনে করত৷ মানুষের সকল কাজের স্রষ্টা মানুষ নিজেই বলে বিশ্বাস করত৷ কোয়ান্টামের মুক্ত বিশ্বাসের মাধ্যমেও তাক্বদীর তথা ভাগ্যের লিখনিকে অস্বীকার করা হয়েছে৷ এবং মানুষকে ভাগ্য বিধাতা বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ কোয়ান্টামের প্রসিদ্ধ উদাহরন সার্কাসের হাতির কথাই ধরা যাক৷ ''জঙ্গল থেকে হস্তি শিশুকে ধরে এনে লোহার ৬ ফুট শিকল দিয়ে বেধে রাখতে রাখতে সে বড় হয়েও ৬ ফুট বৃত্তকে তার নিয়তি মনে করে৷ অথচ এখন সে বড়, তার দেহের প্রচন্ড শক্তি দিয়ে এক ঝটকায় শিকল ভেঙ্গে মুক্ত হতে পারে৷ কিন্তু মনোজাগতিক নিয়তির শৃঙ্খল তাকে পরিনত করে অসহায় প্রাণীতে৷ এমনকি সার্কাসে আগুন লাগলে হাতি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিন্তু মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেনা''৷

কোয়ান্টামের এই উদাহরণ দ্বারা নিয়তির শৃঙ্খল ভেঙ্গে বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এবং তাক্বদীরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও মনোজাগতিক শৃঙ্খল আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ যা সরাসরি কোরআন হাদীস অস্বিকারের শামীল৷ ইসলাম বলে তাক্বদীরের ভাল মন্দ আলল্লহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত৷ হাদীসে জীবরাঈলে যে সকল বিষয়ে ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে তাক্বদীর বা ভাগ্যের লেখন৷ তবে এর অর্থ এই নয় যে হাত গুটিয়ে বসে থাকা বরং আল্লাহর আদেশ নিষেধমেনে চলতে থাকতে হবে এবং সত্পয়থে থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে৷ আর বিশ্বাস রাখতে হবে ভাগ্যের লেখনের উপর৷ ছাহাবায়ে কেরাম নবীজী (সা) কে এব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন যে, তবে আমল করে কি হবে? উত্তরে নবীজী (সা বলেন, ''প্রত্যেকের জন্য তাই সহজ হয় যে জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে''৷ হযরত আলী (রা কে কেউ তাক্বদীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেন এক পা উঠাও লোকটি উঠালো৷ এর পর বললেন অপর পা উঠাও তখন সে অপারগতা প্রকাশ করল৷ এটাই হলো তাক্বদীর, মানুষ এক কদম বাড়াতে পারে কিন্তু চুড়ান্ত কিছু করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া৷ সার্কাসের হাতির মত হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কথাও ইসলাম বলে না, আবার কোয়ান্টামের মত নিয়তির শিকল ভেঙ্গে ফেলার কথাও বলে না৷ ইসলামের শিক্ষা হল, মানুষ চেষ্টার মালিক আল্লাহ দেবার মালিক৷ তিনি মঞ্জুর করলে বান্দার চেষ্টা সফল হবে অন্যথায় হবে না৷


কোয়ান্টাম বলে "মানুষ নিজেই পারে নিজের সব কিছু বদলে দিতে৷ রোগকে সুস্থতায়, অভাবকে প্রাচুর্যে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা মানুষের মধ্যেই রয়েছে৷'' পক্ষান্তরে ইসলাম বলে হায়াত-মউত, সুস্থতা-অসুস্থতা, রিযিক, দৌলত বা মান সম্মান সব কিছুরই মালিক আল্লাহ৷ এসব বিষয় আল্লাহর ইচ্ছাধীন, মানুষ এতে কোন রদ বদল করার ক্ষমতা রাখেনা৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ''যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন, যিনি আমার মৃতু্য ঘটাবেন অতঃপর পুনজর্ীবন দান করবেন৷ (সূরা শোয়ারা ৮০-১৮) ''তারা কি দেখেনা যে আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন৷ নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সমপ্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে৷ (সূরা রূম ৩৭) ''তুমি বল আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন৷ (সূরা ইউনুস ৪৯) কাজেই মানুষ নিজেই পারে সব কিছু বদলে দিতে কোয়ান্টামের এমন বিশ্বাস কোরআনের শিক্ষার পরিপন্থি৷


(গ) কোয়ান্টামের মতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইসলাম সকল ধর্মের মূল শিক্ষা এক৷ কাজেই যে কোন ধর্ম পালনই যথেষ্ট৷ কোয়ান্টমের দৃষ্টিতে সকল ধর্মই গ্রহণযোগ্য৷ (কোয়ান্টাম উচ্ছাস পৃ:৯) পক্ষান্তরে কোরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম৷ বাকী সব ধর্ম কুফরী মতবাদ ও ভ্রান্ত৷ কোরআন পাকে বলা হয়েছে : ''নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য দ্বীন এক মাত্র ইসলাম''৷ (সূরা আলেইমরান ১৯) ''যে লোক ইসলাম ছাড়া কোন ধর্ম তালাশ করে কস্মিন কালেও তা গ্রহণ করা হবে না৷ এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত৷ (আলেইমরান ৮৫) তাছাড়া স্রষ্টার সত্ত্বা ও গুনাবলীর সংজ্ঞা প্রত্যেক ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন৷ খৃষ্টানরা তৃত্ববাদে বিশ্বাসী৷ তাদের মতে পিতা, পুত্র ও মেরী এই তিন প্রভু মিলে হয় গড৷ হিন্দুরা ব্রক্ষা, বিষু ও শিব এই তিনের সমষ্টি ওঁম এর পূজারী৷ তাছাড়াও তাদের রয়েছে ৩৩ কোটি দেব-দেবী, এবং তারা ভগমানের জন্ম-মৃতু্য ও জয়-পরাজয়ে বিশ্বাসী৷ বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই, সব কিছু প্রকৃতিগত ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে৷ আর ইসলাম বলে আল্লাহ এক, অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি৷ এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই৷ অর্থাত্‍ ইসলাম একমাত্র একত্ববাদের ধর্ম, বাকী সব বহু ইশ্বরবাদ অথবা নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী৷ স্রষ্টাকে নিয়েই যেখানে এত মত ভেদ সেখানে ধর্মের মূল শিক্ষা বলতে আর কি বাকী থাকে?! তাই কোয়ান্টাম সকল ধর্মের মূল শিক্ষা এক বলে যে মতবাদ প্রকাশ করেছে তা একটি অবাস্তব ও কুফুরী মতবাদ৷


(ঘ) ''কোয়ান্টাম প্রত্যেককে উত্সাাহিত করে আন্তরিক ভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনে''৷ (কোয়ান্টাম উচ্ছ্বাস-পৃ: ১৪৩) কোয়ান্টামের এই ঘোষণা বা উত্সাাহ প্রদান খোদাদ্রোহীতার শামিল৷ কেননা আল্লাহ পাক সকল আহলে কিতাব, মুশরিক ও পৌত্তলিকদের কোরআনের মাধ্যমে বার বার ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিজ কুফুরী ধর্মে অটল থাকার ভয়াবহ পরিনতির কথা বুঝিয়েছেন৷ এর বিপরিত কোয়ান্টাম প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনে উত্সাবহ প্রদান করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে৷ ইসলামের দিকে আহ্বান করে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে৷ '' আর আহলে কিতাবরা যদি ঈমান আনতো তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গল হতো৷'' (আলইমরান-১১০) ''আর যদি আহলে কিতাবরা বিশ্বাস স্থাপন করত এবং খোদাভীতি অবলম্বন করত তবে আমি তাদের মন্দ বিষয় সমূহ ক্ষমা করে দিতাম এবং তাদেরকে নেয়ামতের উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করতাম'' (মায়েদা-৬৫) আর ইসলাম গ্রহণ ছাড়া মৃতু্যবরণ করলে পরিনতি কি হবে তাও বলা হয়েছে, ''যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না৷ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব৷ পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহয্যকারী নেই৷'' (আলইমরাম-৯১)


পবিত্র কোরআনের এধরনের স্পষ্ট বক্তব্যের পরে কেউ যদি মানুষকে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম পালনে উত্সা হ প্রদান করে তাহলে তা কিছুতেই মানুষের মঙ্গল কামনা হতে পারে না বরং তা হবে প্রবৃত্তি পঁূজা ও ধোকাবাজী৷ সব ধর্মের লোককে খুশি করার মাঝে কোয়ান্টামে কি স্বার্থ রয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়৷ এধরনের মতাদর্শের অনুসরণ করে মানুষ দুনিয়াতে কিছু পেলে পেতে পারে তবে পরে কালে রিক্তহস্ত হওয়া নিশ্চিত৷ এখন যদি কেউ পরকালেই বিশ্বাসী না হয় তবে তাকে বুঝানোই বেকার৷


(ঙ) কোয়ান্টাম যেহেতু সবধর্ম সমন্বয় দর্শনের প্রবক্তা তাই সে সব ধর্মের কিছু কিছু ধর্ম বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছে৷ যেমন বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টা নেই তাই মানুষকে কেউ সৃষ্টিও করে নাই বরং মানুষের জন্ম মৃতু্য একটি প্রাকৃতিক প্রবাহের মত অনবরত প্রবাহিত হয়ে চলছে৷ এখানে কেউ কাউকে সৃষ্টি করেনি৷ বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের আদিও অন্ত নেই৷ (ইসলামী আক্বীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ: ৬৬০) কোয়ান্টাম বৌদ্ধ ধর্মের এই মতকে গ্রহণ করে নিজেও হুবহু একই পোষণ করেছে৷ কোয়ান্টাম কনিকার ১৫ নং পৃষ্টায় বলা হয়েছে ''আপনি কসমিক ট্রাভেলার- মহাজাগতিক মুসাফির৷ আপনার জন্ম নেই মৃতু্য নেই৷'' জন্ম যদি না থাকে তাহলে জন্মদাতা ছাড়াই মানুষ অস্তিত্য লাভ করেছে৷ তার মানে প্রাকৃতিক ভাবেই সব হচ্ছে স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই৷ (নাউযুবিল্লাহ) একই পুস্তকে ২১ নং পৃষ্টায় বলা হয়েছে যা বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বাস৷ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে '' আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অত:পর রিযিক দিয়েছেন, এর পর তোমাদের মৃতু্য দিবেন, এর পর তোমাদের জীবিত করবেন৷ তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে এসব কাজের মধ্যে কোন একটিও করতে পারে? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান৷'' (সূরা রূম -৪০) ''কল্যাণময় তিনি যিনি নভমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন৷ এবং এতে রেখেছেন সূর্যও দীপ্তিময় চন্দ্র৷ (ফোরকান -৬১) কথা অনেক লম্বা হয়ে গেল তাই আর দীর্ঘ না করে যারা কোয়ান্টম কোর্স করতে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে দু'একটি কথা বলেই শেষ করছি৷ শহীদ আল বোখারী এক জন জ্যোতিষী ও স্বঘোষিত সর্বদ্রষ্টা৷ (নাউযুবিল্লাহ) ইসলামে এধরনের জ্যোতিষ বিদ্যা ও অতীন্দ্রিয় বিদ্যার চর্চা সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে৷ কোয়ান্টামের কমান্ড সেন্টার অধ্যায়ে যা কিছু শেখানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ঈমান বিধ্বংসি৷ আপনারা হয়ত জানেন না যে, এধরনের জ্যোতিষীদের কাছে গমন হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী ঈমান বিনাশী৷ নবীজী (সা বলেন ''যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গমন করল এবং তার কথাকে প্রত্যায়ন করল সে যেন মোহাম্মদের উপর অবতীর্ণ দ্বীনকে অস্বীকার করল৷" অপর হাদীসে বলা হয়েছে, ''যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে কোন বিষয় জানতে চাইলে তার ৪০ দিনের নামায কবুল করা হবে না৷ (সুনানুল কুবরা- ৮/১৩৮) অতএব কোয়ান্টামের এসকল ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ড ও কুফরী মতবাদ থেকে বেঁচে থাকা সকলের কর্তব্য৷

 Source: http://www.amarbornomala.com